(শান্তপল্লী ফকিরাবাদকে)

(১)
কখনো বেরোইনি আমি এর আগে
মায়ের কোল ছেড়ে এমন করে,
পিছু ঠেলে বাড়ির মধুর পরিবেশ
পাড়ার সাথীদের কভু অবজ্ঞা করে;
অথচ, বের যে আমায় হতেই হবে
অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্নজাল বুনতে,
কৈশোরের আড়মোড়া ভেঙ্গে
তরুণ কিংবা পুরুষ এক হয়ে উঠতে।

একদা তাই কলেজে যাওয়ার পথে
কলেজের নিকটবর্তী এক স্টপে নেমে
পিছু হাঁটি আমি যার
তার বাড়িতেই হয় আবাস আমার।
অজানা উদ্বেগে, শিহরিত দেহে
চলি আমি অচেনা সে পথ,
আর কেবলই ভাবি-
কেমন হবে, আমার অনাগত ভবিষ্যত!
অথচ, পিছনে কাঁদে আমার
ঘরকুনো, অলস, ভীতু শৈশব-কৈশোর;
মায়ের উষ্ণ-বিছানা, বাবার মিষ্টি হাসি
আর আমিহীন সাথীদের নূতন ভোর।
অতঃপর,
ঐতিহ্যবাহী হাবিলীতে এক আমি আগত,
পারষ্পারিক পরিচয়ে সবাই জানায় যেথা স্বাগত;
সকলের ছোট হয়েও বড় আমি পদবীর ভারে
ক্রমেই গড়ে অবস্থান এক সবার মনের ঘরে।
একে একে এমন করে হয়
অনেকের সাথে সখ্যতা-পরিচয়-জানা;
ছেলেপুলেরা পেয়ে যায় মজার সাথী এক
হয়ে উঠি আমি সকলের চিরচেনা।

বন-বনানী আর পাখ-পাখালীর গুঞ্জন গানে,
আমার যাতায়াত হয় জেলা শহরের পানে।
*বৃন্দাবন'এর ছাত্র বলে হই আমি আদৃত,
কেউবা আবার পথ আগলে হয় পরিচিত।

অথচ, দু’বছর যেতে না যেতেই
সকলের মায়া ছেড়ে আসি আমি চলে;
রাজধানীতে বাঁধবো আমার বাসা
চড়বো শিক্ষার উঁচু ডালে বলে।
যদিও আগলে ধরেনি আমায় কেউ
বাধা দেয়নি কেউ কভু অত-শত;
তথাপিও, কৃতজ্ঞচিত্তে রেখে গেলাম আমি
আমার ‘হৃদকমল’ তাদের ঋণে গচ্ছিত;
সেই নিবিড় পল্লীর পথ-ঘাটের কাছে
বন-বনানীর ঝোঁপ-ঝাড়ের কাছে
আত্মীয়দের অপার মমতার কাছে
পরিচিতজনদের অনুভবের কাছে
শান্ত পুকুরের শীতল জলের কাছে
মোঘল আমলের মসজিদের সারির কাছে
সর্বোপরি আমার গর্বিত সময়ের সাথীদের কাছে।

আমার স্মৃতি পাতা উল্টাবার সামর্থ যার হবে
‘গচ্ছিত হৃদকমল’ নিশ্চিত সে দেখতে পাবে।

(২)
যার আগ্রহ আর প্রেরণায়
হয়েছিলাম আমি প্রথম বাড়ির বা’র,
গরম খাবার বেড়ে যিনি
বসে থাকতেন অপেক্ষায় আমার;
সেই ভাগ্নে আর মায়াবতী বোন
নেই যে এ ভব-সংসারে আর,
আমার চোখের জলের প্রার্থনা
তাদের তরে, দরবারে আল্লাহর।

*বৃন্দাবন= সরকারী বৃন্দাবন কলেজ, হবিগঞ্জ।

[২৫/১২/২০১২]