ছন্দের মেলা' নামে একটি সুন্দর আয়োজনের ঘোষণা হয়েছে।খুব খুশির সঙ্গে দুঃখ বাজলো এই কারণে----অনেকেই বলছেন তাঁরা নাকি ভালো ছন্দ জানেন না,তাই এতে অংশও নিতে পারছেন না।
এ কেমন কথা ভাই!সবাই মিলে- মিশেই তো এই আসর।ছন্দ ব্যাপারটা কি একটু বলি?একটাই তো কবিতা---যে কোন ছন্দে লিখলেই হবে।একটা কথা---প্লিজ,কেউ যেন নাম তুলে নিও না!
দেখবে এরপর ছন্দে কবিতা লিখতে নেশা ধরে যাবে।কবিতা তো ছন্দেই লেখে।আর অন্ত্যমিল ছাড়াও যে কবিতা হয়---বিজ্ঞপ্তিও তো
তাই বলছে।
ধাপের পর ধাপ সংক্ষেপেই বলছি ।কারণ জায়গা কম।আবার আমার ওয়েবসাইট না অফ হয়ে যায়! অক্ষর আগে জানতে হবে।
না হলে মাত্রা গুণবে কি করে?
মনে কর একটা স্কেল।দৈর্ঘ্য মাপবে তুমি।হয় ইঞ্চি বা সেন্টিমিটার।
ছন্দ মাপা হয় মাত্রা দিয়ে।ছন্দের ইউনিট হল মাত্রা।
১ ১ ১ ১ ১১১ ১১১
আমি যদি জন্ম নিতেম্ =মোট ১০টি অক্ষর আছে
প্রথম চারটি ১ করে=৪টি অক্ষর।জন্ম-এ যুক্তাক্ষর।
অনেক ছন্দ আছে যেখানে এই অক্ষরই আবার --যেমন জন্ বা 'তেম' ২মাত্রা হয়।তার মানে ----
১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ =৮টি অক্ষর
আমি যদি জন্ম নিতেম্ /
তার মানেই প্রকৃতি অনুযায়ী মাত্রা গুণতে হবে যেটা ছন্দ রপ্ত হলেই
নিজেই বুঝতে পারবে।
এবার স্বর। বাংলাভাষার স্বরবর্ণে আছে ছয়টি পূর্ণ স্বর(অ আ ই উ
এও)---এরা স্বাধীন।আবার এদের সঙ্গে এরা অন্য কোন স্বরকে যুক্ত করতে পারে।যেমন --অ+ই্=অই(সই,কই)।এদের বলে
পূর্ণ স্বর। ছন্দের পরিভাষায় যাকে বলব মুক্তস্বর।
আর ই্ উ্ এ্ ও্ যোগ করে কতকগুলি স্বর গঠন হয়।
যেমন পাউডার। এখানে পাউ্--- রয়েইছে।আর অন্য স্বর নেবার এর ক্ষমতা নেই।এগুলিকে বলে রুদ্ধস্বর(বদ্ধ স্বর নয় কিন্তু)।
পাওনা-ও তাই।ঐ ঔ রুদ্ধ স্বর।
অক্ষরকে ছন্দের ভাষায় 'দল' বলে। ১মুক্তদল ২ রুদ্ধদল--দু রকম ।
মুক্তদল হল ------যার অন্ত নেই।যার চলাচল মুক্ত।
১ ১ ১ ১ ১ ১
উদাসিনীবেশে
যেখানে প্রতিটা দলই শেষ হচ্ছে অন্তে গিয়ে ----সেটা রুদ্ধদল।
হসন্তযুক্ত অক্ষরকে বলে হসন্তঅক্ষর।
এ পর্যন্ত পরিষ্কার? নাহলে আবার পড়ো।বার বার পড়লে বুঝবে।
এবার লয়।কবিতাপাঠের সময় পঠনের গতি ভঙ্গি থেকে যে
সুরের সৃষ্টি হয় তাকে লয় বলে।
ধীর লয়----গগনে গরজে মেঘ /ঘন বরষা
কূলে একা বসে আছি/ নাহি ভরসা।
মধ্য লয়----নগরের নটি /চলে অভিসারে /যৌবনমদে মত্তা
দ্রুতলয়-----বাঁশবাগানের /মাথার উপর/
চাঁদ উঠেছে ওই
এবার পর্ব-----পর্ব হল কতকগুলো দলের সমষ্টি।একটানা
মানুষ পড়ে যেতে পারেনা।তাকে থামতে হয়।নিঃশ্বাস নিতে হয়।
সে অনুযায়ী একটা চরণে বিরতি পড়ে।এই বিরতিগুলোই পর্ব।
আর চরণ হল অনেক বড় বিরতি।
পূণ্যে পাপে দুঃখ সুখে /পতনে উথ্থানে---একটা চরণ।দুটো পর্ব।
ছন্দ তিন রকম।অক্ষরবৃত্ত মাত্রাবৃত্ত স্বরবৃত্ত।
অক্ষরবৃত্ত-----এখানে মাত্রাগণনা হবে ১ ,১ করে।
মূলপর্বের মাত্রাবিভাগ---৪+২।সুতরাং পুরো পর্বটার মাত্রা
৪+৪=৮।দ্বিতীয় পর্বে ৪+২=৬
সুতরাং পুরো পর্বে মাত্রাবিভাগ ৮+৬, ৮+১০
একটা তান বা সুর থাকবে।
লয় ধীর হবে।
শব্দের শেষে যে হসন্তযুক্ত অক্ষর --তা' দুমাত্রার হবে।প্রথমে থাকলে ১মাত্রাই হবে।
১ ২ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ২ ১ ১ ১
যেমন--অনেক সৌন্দর্য আছে । হৃদয় ভরিয়া----সৌন্ শব্দের ভেতরে বলে ১ মাত্রাই হয়েছে।
মাঝখানের পর্বের ভেতরের সব অক্ষর বা দল ১ মাত্রার হয় বলে
একটা সুবিধে হল---অনেক মাত্রা এ তে যোগ করা যায়।
যেমন--দুর্দান্ত পান্ডিত্যপূর্ণ /দুঃসাধ্য সিদ্ধান্ত----কতগুলো অক্ষর হবে বলো!কিন্তু মাত্রা সেই এক----১৪মাত্রা।
১ ১ ১১ ১১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১
দুর্দান্ত পান্ডিত্যপূর্ণ দুঃসাধ্য সিদ্ধান্ত
।
মাত্রাবৃত্ত----এ ছন্দে শব্দের ধ্বনিই প্রধান।কোন তান বা সুর নেই।
মূল পর্বটির মধ্যে ৫,৬, বা৭ মাত্রা থাকে।
হসন্ত অক্ষর শব্দর যেখানেই থাকুক প্রথম বা শেষ--দুমাত্রা হবে।
১ ১ ২ ১ ১ ১ ২ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১
আমি দীপশিখা /আলোকবালিকা /বসি যবে বাতা/য়নে
=৬ ৬+ +৬ ২
আরও উদাহরণ----
১ ২ ১ ১ ১ ২ ১ ১ ১ ২ ১ ১ ১ ১
সাগর জলে /সিনান করি /সজল এলো /চুলে
এবার স্বরবৃত্ত ছন্দ--------
এই ছন্দে কোন তান থাকবেনা,কোন ধ্বনির প্রাধান্য থাকবেনা।
এ তো গেল কী কী থাকবে না।তাহলে থাকবে কী?
থাকবে একটা শ্বাসের আঘাত।একটা জোর। একটা প্রায় ধমক।
'এ্যাই।কি হচ্ছে?'এ এবং' কি' এর ওপর জোর পড়েনা?
শ্বাসাঘাত তাই।প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে একটা ঝোঁক পড়ে।
সব অক্ষরই ১ মাত্রা।(ব্যতিক্রমও আছে।সে অন্য প্রসঙ্গ।।)
সেটাই স্বরবৃত্ত ছন্দ।
১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১
------রায়বেঁশে নাচ/ নাচের ঝোঁকে/ মাথায় মারলে/ গাঁট্টা
তাহলে দাঁড়াল--৪+৪+৪+২
আরও উদাহরণ---
হেড অফিসের /বড়বাবু /লোকটি বড় /শান্ত-----ইত্যাদি।
ছন্দ একদিনে বা একপাতাতেই বলা হয় না--তবু তোমাদের প্রয়োজন বুঝেই যতটা পারলাম সংক্ষেপেই বললাম।একটাই
তো লিখতে হবে।আমার মনে হয় আমার লেখাটা খুব জটিল হয় নি।লিখো যেন সবাই।দেখবে মজা পাবে।এটা কাজে লাগলে
সার্থক হবো।
সব্বাই খুব ভালো থেকো।
স্বপ্নাদি।