বাংলা ভাষায় কবিতা-পাঠকের সংখ্যা বরাবরই কম।রবীন্দ্র-উত্তর
যুগে রূপক কবিতা,সাঙ্কেতিক কবিতা নিয়ে অনুযোগ ছিলই।এখনও
রয়েছে।এর সঙ্গে যদি দুর্বোধ্যতার অভিযোগ মেলে তাহলে পাঠকের
সংখ্যা আরও কমে যাবে।কবিদের তাতে সমূহ সর্বনাশ।সত্যিই যা
দুর্বোধ্য তা কবিতা বলে গণ্যই হয়না।যা এলোমেলো,অসংলগ্ন
প্রলাপের মত তা তো বোধে না আসতেই পারে।কিন্তু কিছু কবিতা
আছে যা বোঝার জন্য পাঠকেরও মস্তিষ্ক একটু খেলানো চাই।তা হল
দুরূহতা।তা ছিল,আছে,থাকবে।এই দুরূহতার পথ ধরেই এসেছে কাব্যে সুর-রিয়ালিজম্।দুরূহতা না থাকলে জটিল জীবন-পথে কাব্যের
এগোনো মুশকিল।দুরূহতা এক শিল্প।'পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে
নাটোরের বনলতা সেন'।একটা সময় ছিল যখন তোলপাড় হয়েছিল
এই উপমা নিয়ে ।পাখির নীড়ের মত চোখ আবার কি!কিন্তু সময়ের
সাথে সাথে আমরা বুঝেছি এর সৌন্দর্য কোথায়!এই দুরূহতা প্রয়োগ
করেই কাব্যে সৌন্দর্য যুক্ত করা যায়।কাজেই পাঠকের এবিষয়ে
ভূমিকা হল ---পাঠ,বার বার পাঠ,একটু গভীর চিন্তা,সব ব্যাপারে
একটু ওয়াকিবহাল থাকা।দুরূহতাকে স্বীকার না করলে তো
সুর্-রিয়ালিজমকেও দূরে ঠেলে রাখতে হবে।আবার বলছি,যা দুর্বোধ্য
তা কবিতা নয়। কিন্তু দুরূহতা কাব্যে চিরকাল গ্রাহ্য।
আয়রে ঝঞ্ঝা,পরান বধূর/আবরণ রাশি করিয়া দে দূর
করি লুন্ঠন অবগুন্ঠন বসন খোল/দে দোল দোল।
কিছু হয়ত বুঝলাম না,কিন্তু কবিতার কোথাও একটা কিছু সুর
আছে,যা হ্যামলিনের বাঁশির শব্দের মত আমাদের টেনে রেখেছে।
এটাই কবিতার দুরূহতা।
কবি নিজে তাঁর কবিতার ব্যাখ্যা দিতে চান না।কেন না,
তাঁর কবিতার চলাফেরা বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা থাকে।অর্থাৎ
কবি যা বলে দিলেন,সেটাই একমাত্র কথা,যেখানে বিভিন্ন জনে
করলে তার গতিবিধি অনেক স্বাধীন হবে।কবিতা তো বাজবার জন্য-রবিঠাকুর বলেছেন।তাই পাঠকের করা ব্যঞ্জনাও সমান
আদরণীয় ।
সুর্-রিয়ালিজম মানে ,যা বাস্তব নয়,স্বপ্নে দেখা।স্বপ্ন কে-ই বা
পরিষ্কার দেখে!তাই বোঝা না বোঝায় মেশা!এই আবছা ভাবটা
কাটানোর কায়দা রপ্ত করতে হবে,প্রচুর পাঠ,দুরূহতার ঘাঁটিগুলো
জেনে নেওয়া যাতে আক্রমণ সফল হয়।
কবিতা যাঁদের দুর্বোধ্য ,আমরা জানাতে দ্বিধা করি।কারণ আমাদের
সভ্যতা,ভদ্রতা।কিন্তু যার মধ্যে এ মালিন্য নেই(যেমন শিশু) সে তো বলবেই--রাজা তোর কাপড় কোথায়!