'একটি বৃষ্টির সন্ধ্যা' য় জয় গোস্বামী লিখেছেন:
'চোখ চলে গিয়েছিল,অন্যের প্রেমিকা,তার পায়ে
যখন,অসাবধানে,সামান্যই উঠে গেছে শাড়ি-
বাইরে নেমেছে বৃষ্টি।লন্ঠন নামানো আছে
টেবিলের নীচে,অন্ধকারে
মাঝে মাঝে ভেসে উঠছে লুকোনো
পায়ের ফর্সা আভা...
.....
এখন নেমেছে বৃষ্টি।এখন এ ঘর থেকে
উঠে গেছে সে ও।
শুধু,ফিরে আসছে হাওয়া।শুধু,এক অক্ষরের চোখের মতন
মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে টেবিলের তলার লন্ঠন।'
বৃষ্টি মানুষকে অকপট করে।অকপটে মেলে ধরে তার কাঁপা কাঁপা কামনা- বাসনা বৃষ্টিতেই।
যুগে যুগে কবিরা বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেছেন।বৃষ্টির এরকম নানা রূপ নানাভাবে তাদের লেখায় ধরা দিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে আমাদের বাংলা কবিতা ডট কমের কবিরা তার ব্যতিক্রম নন। আজ দেখে নেবার চেষ্টা করব,তারা কে কিরকম বৃষ্টি নিয়ে ভাবলেন।
প্রথমেই যার কবিতা,তিনি প্রবুদ্ধ কবি দিলীপ চট্টোপাধ্যায়।কবিতার নাম- 'বৃষ্টি ভেজা আম'।
....' ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি এলো,পূবালী পবনে।
গড়িয়ে যাওয়া বেলা শেষে
সোনা সোনা মেঘে----
ঘন কালো ছায়া জলে,অসম সাহসী ঝাঁপ;
'দিঘির আম'--- কেঁপেছিল হাত।'
কত সহজ সুন্দর একটি বৃষ্টি দিনের ফেলে আসা ছবি ভেসে উঠল মনের আয়নায়।
পারমিতা(৫৮)অনুরাধা তার ' অপূর্ণ শ্রাবণ' কবিতায় এক অতৃপ্তিকে ধরেছেন:
'ঈশান কোণে মেঘ
জমাট বাঁধে প্রতি বসন্ত শেষে !
ঝড় ওঠে !
বৃষ্টি চেয়েছিল মেঘলা ঘর।
.......
বৃষ্টি ঝরেনি।'
বৃষ্টির রাত অপেক্ষার রাত।প্রেমিক প্রেমিকার চিরায়ত প্রতীক্ষার রাত।
'বৃষ্টি ভেজা এই রাতে,ঘরের কিনারায়,
বসে আছি একা আমি,তোমার অপেক্ষায়'
লিখেছেন তীর্থ রায় তার ' বৃষ্টির রাতে' কবিতায়।
এবার বৃষ্টিটা যেন কেমন।কোথাও বানভাসি তো, কোথাও বৃষ্টি নেই।বৃষ্টি ছাড়া কি চলে? বৃষ্টি গেল কোথায়? অসিত কুমার রায় ( রক্তিম) সটান হাজির বরুনদেবের কাছে ,
'বৃষ্টি ফিরিয়ে দিন'
'বরুনদা,শুনতে পাচ্ছেন?
আপনি কিন্তু ভীষণ অন্যায় কাজ করেছেন।
........
বৃষ্টির দেবীকে ফিরিয়ে দিন।'
বৃষ্টি না পেয়ে, পেয়ে সুমিত্র দত্তরায়ও হতাশ।
'বর্ষা ছিল নিয়ম মাফিক ভূগোলে,
দেখছিল মন উদাস করা পাগলে।
শরৎ মেঘ দেখে,
না জানি কোন শোকে
ইতিহাস হয়ে মিলিয়ে গেল গুগলে।'
(ঋতুরঙ্গ)
মোজাহেদুর ইসলাম ইমন তরুণ কবি।খুব স্বাভাবিক 'বৃষ্টি মানে' তার কাছে অন্যরকম।
'বৃষ্টি মানে হঠাৎ করে তোমায় মনে পড়া।
বৃষ্টি মানে তোমার কাছে আমার ছুটে যাওয়া
বৃষ্টি মানে মেঘলা আকাশে নতুন দিনের আশা
বৃষ্টি মানে আমার কাছে তোমায় ভালোবাসা।'
সংহিতার কাছে 'বৃষ্টি ভেজার দিন' এক বাঁধনহারা মুক্তির দিন।
'উড়ছে শব্দ মনের ভিতর,
জুড়ে বায়না অবিরত,
থাকবে না তারা বন্দী পাতায়
আজ বৃষ্টি ভেজার দিন
মানছে না মন আমার শাসন,
ভাঙছে নদীর চরের মতন,
আমি শুধু খুঁজছি এখন
তোকে----'
বৃষ্টি থামার পরের ছবিটি পাচ্ছি চিন্ময় মন্ডলের ' শ্রাবণধারা' কবিতায়:
'সময় গড়ায় বারি থেমে যায়
আলোকে আকাশ ভরে,
ছোট ছেলে একা কাগুজে নৌকা
ভাসায় জলের পরে'
মোতাহার হোসেন নীল ১১ বছর আগে তার প্রথম কবিতা শুরু করেছিলেন 'বর্ষা' দিয়ে।
এবার লিখলেন:
'গ্রীষ্ম শেষে বর্ষা এলো
আনন্দেতে নেচে,
গ্রীষ্ম পোড়া শুকনো গাছ
উঠল আবার নেচে'
নাসরিন আক্তার খানম 'বৃষ্টি'কে দেখেছেন পাশের প্রতিবেশীটির মতন:
'ঝম ঝমঝম বৃষ্টি পড়ে,
টিনের চালে বাদন করে'
ইরিন অরণ্যর কাছে 'বৃষ্টির আমেজ' একটু হলেও বৈচিত্র।
'কর্মব্যস্ত জীবনে
এক ঘেয়েমি নিরানন্দ
বৃষ্টি আনে ছুটির দিনে
একটু বৈচিত্র'
মো: হেলাল উদ্দিনের 'শ্রাবণ দিনে'র অনুভূতি অনেক পরিণত:
'বৃষ্টির রিমঝিম অঝোর ধারাতে
পৃথিবীর বুকে নেমে আসে
এক অন্য রকম ভালো লাগা,
যে ভালো লাগার মাঝে থাকে
হারিয়ে যাবার ইচ্ছা
থাকে খুঁজে পাবার ইচ্ছা'।
বৃষ্টি আর কমনীয় থাকে না আমিন রুহুলের 'বৃষ্টিতে আজ' কবিতায় এসে।বৃষ্টি তার কাছে আর্তনাদের চোখের জল।
'বৃষ্টির ভিতরে যাই
অথচ শুধুই শুনি---
কালো মেঘে ঢাকা আকাশের চিৎকার'
'বৃষ্টিজল' আমীন রাহুলের কাছে আরো রূঢ় বাস্তব:
'ধর্ষকের দর্শনে অর্গাজম আকাশের
ভিজে গেছে মাটির শরীর'
রেদোয়ান আহমেদ আবার প্রাণ ফিরে পান 'বৃষ্টি'তে:
'কালো আকাশের কোল বেয়ে
উড়ে যাওয়া সাদা বক
যেন বলছে আমি আজ বাঁধন ছাড়া।
মাছরাঙার ঠোঁটে আজ
জীবন্ত মাছের স্পর্শ
আজ প্রাণ ফিরে পেয়েছে ধরনী'
আবার অপার ছন্দ বৃষ্টি বিরহ কাতর।তার সুন্দর কবিতা 'শীত- বৃষ্টি '।
'বৃষ্টি,তুই কেমন আছিস বল----
এখনো কি রামধনু রং মেখে
আকাশ বাতাস ভরিয়ে দিস সুখে ?
......
আমার দেশে শীতের প্রভাব বেশী,
উষ্ণতা নেই,বরফ কুচি ভাসে'
এইবার ড: সুজিতকুমার বিশ্বাসের 'শ্রাবণ বাদল' কবিতাটি।
'শ্রাবনবাদল ঝরে মোর আঙিনায়----
প্রথম প্রেমিকা তুমি দেখি দরজায়।
ঝরেছে বাদলধারা প্রেমের মতন
সেই চুলে, রাঙাহাসি চোখের রতন'
ছন্দপ্রিয় কবির নিটোল ছন্দে গড়া।
'বৃষ্টি প্রণয়' কবিতায় সঞ্জয় চক্রবর্তী পঙ্কিল থেকে বৃষ্টিস্নাত শুদ্ধ প্রণয়কে তুলে আনতে চান।
'বৃষ্টির দোকানে আজ খুব বিকিকিনি,
দেখ ঝুম বৃষ্টি পড়ে ।
দেরী রেখ...
চলো নেমে যাই...
পঙ্কিল অবগাহনে কিনে ফেলি
বৃষ্টিস্নাত যত প্রণয়ী উপহার'
'আজ বৃষ্টি ঝরে' কবিতায় মুহম্মদ মুসা অনেকটা শারীরিক।
'ছুঁয়েছে বর্ষা নরম শরীর
মেঘলা ফাঁকের লুকানো শরীর'
শেষ করবো প্রিয় কবি শ্রী সেনগুপ্তর বৃষ্টি আবাহন দিয়ে ।কবিতার নাম 'এসো বৃষ্টি এসো'
'তুমি না এলে রুক্ষ মাঠ ঘাট,
তুমি না এলে শূণ্য রাজ্য পাট।
তুমি না এলে ভরবে না খাল ডোবা,
তুমি না এলে প্রকৃতি ও যেন বোবা।
তুমি না এলে ভিজে নাকো ছাতা
তুমি না এলে শূণ্য কবির খাতা।
ফিসফিস করে,ঝমঝম করে এসো
বন্ধ্যা মাটির বুক জুড়ে তুমি ভাসো।
এসো বৃষ্টি এসো।।
আসরের পাতায় প্রায় ৫০ টিরও বেশি কবিতা দেখছি বৃষ্টি নিয়ে ।মজার ব্যাপার প্রায় ১০ জন কবি রয়েছেন যাদের নামের সাথে বৃষ্টি জড়িয়ে।স্পষ্টত:ই সব কবিতাগুলি নেওয়া গেল না স্থানাভাবে।ব্যাখ্যাও অনেকের কবিতায় সংক্ষিপ্ত রাখতে হোল।মোটামুটিভাবে ১৯/৭ থেকে আজ পর্যন্ত অর্থাৎ যেটুকু পাতায় পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে বৃষ্টি সংক্রান্ত কবিতাগুলি বাছা হল। কেউ ভালোবেসে আরো কবিতা সংযোজন করতে চাইলে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আরো সমৃদ্ধ হবে।