কিছু কিছু কবিতা পড়ে কিছুই বুঝি না।কিছু কিছু কবিতা তবু কিছুতেই ছাড়া যায় না।কবিতারা বাধ্য করে বারবার পড়তে,রস খুঁটে নিতে। এমনই একটি কবিতা আসরের স্বনামধন্য কবি শ্রাবণী সিংহের 'অকালবোধনের জলে'।
সাকুল্যে দশ লাইনের কবিতা।গদ্যছন্দে লেখা।কিন্তু ভাবের গভীরতায়,উপমার চমৎকারিত্বে সহজেই আকৃষ্ট করে যে কোন মনোযোগী পাঠককে।
এখন দেখে নেওয়া যাক,কি আছে কবিতাটিতে। প্রথমেই পাচ্ছি একটি দুর্দান্ত লাইন :
'লাল- মেরুনের তীক্ষ্ম আঘাতে যে ভোর আসে,
শিউলি তার দর্শক...'
এ কি শুধুই এক ভোরের বর্ণনা ? কবি কি ইঙ্গিত দিলেন না শিউলির মতো ভোর এমনি আসে না।শিউলির মতো শান্তির ভোর অনেক দুর্যোগ,তীক্ষ্ম আঘাতের পরে অর্জিত হয়।
পরের দু'লাইন :
'আমাদের দুঃখদিন হ্রস্ব ই'র মত অহিংস আড়াল করে আছে
সমস্ত আসবাব'
এই যে আড়ম্বরপূর্ণ বহিরঙ্গ,তার আড়ালে আছে আমাদের দুঃখদিন।কেমন করে আছে? হ্রস্ব ই'র মতো অহিংস।হ্রস্ব ই' তে ইঁদুরছানা ভয়ে মরে। আমাদের দুঃখদিন যেন তেমনই দীন,প্রতিবাদ
প্রতিরোধে কুন্ঠায় লীন। হ্রস্ব ই' র এমন উপমার জন্য অকুণ্ঠ অভিনন্দন,প্রশংসা কবিকে জানাতেই হয় ।
তারপরে আরো একটি অমোঘ লাইন:
'গাভীর সামগান নৈঋত কোণে..'
নৈঝত কোণের বৈশিষ্ট্য তা' গৃহস্বামীকে তার দায়িত্ব, কর্তব্যকে স্মরণ করায়।গাভী অর্থে নারীকুল তাদের মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে আমাদের সেই কর্তব্যকে স্মরণ করাতে চায়,সুবিচার প্রতিষ্ঠা চায় নারীর প্রতি প্রতিটি অসম্মানের।
'আনন্দ উৎসবের আগমন উপলক্ষ্যে নতুন কিছু জানা ও চেনা
পরিযায়ী '
উৎসব আনন্দ আসে যায়।কিন্তু কবি চান :
'আসুক পুরনো সর্বনাশে
শরৎকাল
মায়ের ছায়া অকালবোধনের জলে'
শত দুর্যোগের মধ্যেও শরৎকাল আসুক।যেমন পুরাকালে শরৎকালে মা এসেছিলেন মূর্তিমান সর্বনাশ নিয়ে।আজও দুষ্টের দমনে সেই মাকে চাই।আজ জলে সেই মায়ের ছায়া।মা আসছেন।অভয় দিতে।ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে।নতুন ভোর উপহার দিতে।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়,কবিতার খুব সামান্য কাছে পৌঁছাতে পারলাম।আসলে,ভালোলাগাটুকু ছড়িয়ে দিতে চাইলাম আমার মতো করে আপনাদের মাঝে।আপনাদের মন্তব্যে আরো সমৃদ্ধ হব,প্রত্যাশা রইল।