গরম।অসহ্য গরম।হাওয়ায় আগুনের হলকা।
মাটি তেতে পুড়ে আগুন।কোথায় জিরোবে মানুষ একটু ।প্রাণ যে ওষ্ঠাগত । ঢাকনা দেওয়া হাঁড়িতে ফুটতে থাকা ভাতের মত দমবন্ধ পরিস্থিতি। না,আজকের গ্রীষ্মকালীন কোন বিবরণ দিতে বসিনি,আমার আপনার এরকম অতি সাধারণ কথা দিয়ে শুরু হয়েছে প্রিয় কবি সমীর প্রামাণিকের 'গ্রীষ্মকাল' কবিতার প্রথম পাঁচটি লাইন।
ঠিক তার পরেই মোচড় ।'তবু,এটাই নাকি কষা ফল সুমিষ্টকরণের প্রাকৃতিক বন্দোবস্ত!
এটাই নাকি! সরস বৃষ্টি ফোঁটার বিছানা তৈরির এক প্রকৃতি পথ!'
গ্রীষ্মকালীন ফল যেমন,আম ,জাম,কাঁঠাল পাকে এ গরমে। স্বাদে মিষ্টি হয় পর্যাপ্ত গরম পেলেই।কৃত্রিম ভাবে ফল পাকানোর কথা জানি,তবে এই প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় পাকানো ফলের সাথে যেন তুলনাই চলে না। আবার গরমে জল বাষ্পীভূত হয়ে মেঘের সঞ্চার হয়,সেই মেঘ থেকে নামে প্রতীক্ষীত বৃষ্টি। সৃষ্টি বেঁচে ওঠে,প্রাণ ফিরে পায় বৃষ্টিতে।গ্রীষ্মকাল না থাকলে,গরম না থাকলে বৃষ্টি হতো কোথা হতে ?
এও তো আমরা সবাই জানি,এতে মোচড় কোথায়? কেনই বা বলে চললেন কবি অন্তমিলহীন ছন্দের টুং টাং হীন এতগুলি কথা কবিতায়? ভাবতে ভাবতেই পৌঁছে যাই শেষ লাইনটিতে। 'জীবন পূর্ণ হয় এমনি করেই।কষ্টের উত্তাপ সয়ে সয়ে,ব্যথা পথ বেয়ে বেয়ে '
হঠাৎ যেন হাত থেকে কোন বস্তু পতনের শব্দ ।থমকে দাঁড়াই। চমকে ভাবি,আগের দুটি সহজ উপমার কথা।
জীবন কি এমনিই ! এভাবে তো ভাবিনি।আমাদের অহরহ অভিযোগ। হা ভগবান, আর কত কষ্ট দেবে? অসহনীয়তার প্রকাশ পলে পলে। উঃ আর পারা যায় না।অথচ,এই জীবন। জীবনে সুখ লাভ করতে গেলে দুঃখের পথ পেরিয়েই তাকে যেতে হবে। জীবনে পূর্ণতা পেতে গেলে ধৈর্য লাগে,কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা তৈরী করে নিতে হয় ।অল্পে ভেঙ্গে পড়লে তাকে চলে না।তাই গ্রীষ্মকাল কেবল কষ্টের কাল নয়,আগামী সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতিও বটে।আমরা যেন জীবনের দুঃখ কষ্টকে সেইভাবে দেখতে শিখি। এমনই এক জীবন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে কবিতাটি শেষ হয় ।
সহজ কথা সহজভাবে বলা যেমন সহজ নয়,
সাদামাটা কথার বুনট দিয়ে অসাধারণ এক তত্ত্বের বেদী বানানো তেমনই দুরূহ কাজ।সে কাজটি কবি সাবলীলভাবে করেছেন।পাঠককে মনোযোগী রাখতে পেরেছেন শেষ লাইন অবধি।দীর্ঘায়িত করেন নি কোথাও।অথচ মূল কথাটি গেঁথে দিতে পেরেছেন আমাদের মর্মমূলে।আজকের দিনে কবিতাকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এই আর্ট অনুকরণযোগ্য।
পরিশেষে বলি,একটি শব্দ প্রতিবেশ যার মানে পরিবেশ,অভিধান দেখে সেটা জেনেছি।