নৈঃশব্দের কি কোন শব্দ আছে ? চারিপাশের এত অবিচার,ব্যভিচার,লুন্ঠন,হত্যা--তারপরেও আমাদের নিস্পৃহতা,সমগ্র জাতির সুখানুভূতিতে নিদ্রা, এক আশ্চর্য নৈঃশব্দ্য বৈ কি।কিন্তু তা'ই শেষ কথা নয়।এই নৈঃশব্দের এক শব্দ থাকে,চাপা ধ্বনি থাকে।
নিশ্চুপ মানুষের চাপা ক্রোধ,অসন্তোষের ধ্বনি কবি শুনতে পান।তখন সস্নেহে বাড়ানো হাত,কল্যানকামী প্রতিশ্রুতিগুলি বড় দেখনদারি,সন্দেহে ভরপুর মনে হয় ।নিঃসঙ্গ মনে হয় সবার মাঝে থেকে। মনে পড়ে শশ্মানের নৈঃশব্দের কথা। শশ্মানের নৈঃশব্দের কি ধ্বনি আছে,যে শশ্মানে স্থির হয়ে আছে অসংখ্য প্রতিবাদী স্বর।প্রতিবাদী স্বর কি শশ্মানে স্তব্ধ হয়? বরং তারা ফিরে আসে বারবার সহস্র ধ্বনি হয়ে। ধ্বনি শব্দ হতে চায়, শব্দ শব্দব্রহ্ম হতে । হা-হুতাশ, কেবলই দুদিনের শোক শেষে আমরা আবার সব ভুলে যাই সত্যি। তবে একটু অশ্রুজল আবার সেই ধ্বনিকে যেন মনে করায় ।,অন্ততঃ অশ্রুপাতের শব্দে মুহূর্তের জন্যে হলেও কোলাহল থামে।চকিতে হাসি থামিয়ে উদাসীন মানুষেরা জানতে চায়,কে গেল,কেন গেল?
এই সমস্ত মিলিত ধ্বনিই একদিন হয়তো মানুষকে জাগাবে।
এর পরেই কবি দৃষ্টি দিয়েছেন,নির্বিকার নিস্তেজ আমাদের উপরে, যারা প্রতিনিয়ত প্রতিকার চাই আর বসে থাকি অপেক্ষায় অপেক্ষায় কখন রাত্রি হয়,ভয়ে ভয়ে নির্জনে একটু উল্লাসের আশায়।আশাই যে যথেষ্ট নয়, ভোঁতা তরবারি দিয়ে যেমন যুদ্ধ জেতা যায় না,জনগণের নৈঃশব্দ্যের ধ্বনিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বনিতে পরিণত করতে না পারলে আবারও অনন্ত ঘুমের আশ্রয় নিতে হবে আমাদের।
শ্রদ্ধেয় কবি গৌরাঙ্গ সুন্দর পাত্রের 'ধ্বনি' কবিতাটি পড়তে পড়তে এমনই এক বোধের জগতে হারিয়ে যেতে হয় ।কিছু কথা বলা,কিছু না বলা।না বলা কথাগুলি নির্মান করে নিতে হয় পাঠককে তার মত করে।আমি নিশ্চিত এই কবিতাটি পড়েও বিভিন্ন জন বিভিন্ন আঙ্গিক,অর্থ খুঁজে নিতে পারেন।আর এখানেই কবিতার সার্থকতা। বরাবরের মতো এ কবিতাতেও পাই সাবলীল নির্মাণশৈলী।আলো ছায়ার মায়াময়তা।এক দিক নির্দেশ।
কবিতা পাঠের পর এক অসম্ভব ভালোলাগা মনে ধ্বনিত হতে থাকে সর্বক্ষণ।সদা সচেতন প্রবুদ্ধ এই কবিকে সশ্রদ্ধ প্রণাম।