মহামান্য অধিপতি
স্বপঞ্জয় চৌধুরী
সহস্র গ্যালাক্সির ওপারে
যেখানে কোন প্রাণি পারেনি পৌছতে এখনো
তবে আত্মা ও আলো পেরেছে পৌছাতে
সেখানে আত্মার সাথে দেহ জুড়ে দিয়ে
চলছে বিচার কার্য
সমুখে মহাশূন্য তার সামনে
একটি থালাকৃতির চৌম্বক মাঠ
ঘাস নেই, জল নেই আছে শুষ্ক খড়গ আলো
প্রথমেই জলসা মাতাতে আসছেন কুকুর শ্রেণি
মহামান্য অধিপতি আমি পথে পথে ঘুরি
ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে উচ্ছিষ্ট খাই
ক্ষুদ পিপাসায় কখনোবা
আদম মখলুকাত এর দরজায় মুখ ভিড়াই
কখনো পাই চেলার বাড়ি কখনো বাসি রুটি
আমাকে নিয়ে চীন দেশে উৎসব চলে
আমার জ্যান্ত বাকল ছাড়িয়ে
ওরা মেতে ওঠে তৃপ্ত আহারে
আমার আর্তভাষা বুঝেছিল চাঁদ
তাই সে লজ্জায় লুকিয়েছিল তার কুসুম আলো।
মহামান্য অধিপতি আমি জোনাক
আমার পশ্চাৎদেশে আলো জলে
সেই আলোতে জল খায় বুনো হরিণ
আমি সারারাত বসে বসে সাপের সংগম দেখি
তারাদের মিটিমিটি হাসি দেখি
তারপর ধোয়ার ভেতর নিজের ধ্বংস দেখি
মহামান্য আমি পক্ষী
পৃথিবীর সব বৃক্ষ আমার দেশ
আমি মেঘের ওপর ভেসে ভেসে নেই দীর্ঘশ্বাস
প্রবীণ ফলেরা সব আমার আহার
ধীবরের জাল টানা শেষ জলে আমিও চাতক
চোখে চেয়ে দেখি রূপোলী আঁশের ছবি
আজ বৃক্ষ নাই দাবানলে ওরে কুটিরের ভস্ম।
মমহামান্য আমি নিম্নবর্গীয় আদম
আগে জংগলে ছিলাম এখন লোকালয়ে
আমার একশ্রেণি আজীবন দস্যু রয়ে গেল
ছলে বলে এরা ছোঁয় আকাশের প্রদীপ
আর আমরা বুনো ঘাসফুল হাতে নিয়ে
হাওয়াই মিঠাই খাই।
আমাদের কৃষবরণ দেহে জোঁকের মতো
দাগ দেখতে পাচ্ছেন এ হলো ইতিহাসের বর্ণমালা
আমি শস্য ফলাই আমার দেহ থেকে ঝরে নোনাবৃষ্টি
ভাংগা বেড়ার ফোকর দিয়ে ঢোকে ঝড়ের পূর্বাভাস
আর দস্যুরা অশ্ব বোঝাই করে নিয়ে অর্থবহ কাগজ
তারা যখন কাঁচের ঘরে বসে লেখে সভ্যতার কথা
আমরা তখন বেগুনি আলো গায়ে মেখে সভ্যতা গড়ি
আমদের অন্ন নাই, জোড়াতালি দিয়ে চলি মাটির ভূষণ
রোগে পতিত হলে খাই হরতকীর রস।
তারা যখন মটরে ছুটিয়ে ছুটে যায় অবকাশে
আমরা তখন গোধূলির আলো মেপে মেপে লেপি উঠানের পিঠ আমদের নিথর দেহ চিরে
আঁকিবুঁকি করে তরুণ ওঝা খুঁজে পায় নতুন দিশা
আমরা যখন লোহা পিটিয়ে গড়ি লাঙলের ফলা
ওরা তখন কারখানায় বোনে বারুদের বীজ,
দিকে দিকে করতালি আর আলোর ফানুশ
আমরা থাকি জলচোকির নিচে কানে আংগুল দিয়ে
আমার শিশুরা একটা শুকনো রূটির জন্য
চেয়ে থাকে চাতকের মতো মায়াময় চোখে
তাদের নিথর আংগুল চির জাগ্রত রবে মহামান্য।
আজ মহাবিচারের মাঠে আপনার কাছে আর্জি।
দিকে দিকে দস্যুর ঘোড়া আর দানবের হুংকার।
মহাবিশ্বে থমথমে ভাব মহামান্য বিচারক পড়ে শোনাবেন রায়: আজ থেকে সমগ্র পৃথিবীতে বিরাজ করবে এক
অদৃশ্য মহামারি, যাকে চোখে দেখা যাবেনা কিন্তু
যার ভয় তাড়া করবে তোমাদের আমৃত্যু।
দস্যুর ঘোড়া ক্লান্ত সে আটছে নতুন ফন্দি
ওহে বোকা দস্যু আজ তুই মৃত্যুর হাতে বন্দি