ও পথিক একটু দাঁড়াও
এখানে এই নিঝঝুম নিরালায়
শুনশান নিরাবতাকে গায়ে মেখে
আমি শুয়ে আছি এই শান্ত বাঁশঝাড়ের নিচে।
প্রতিদিন আমি তোমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পাই
আজ দুই যুগ হলো কেউ আমার নেয়নিকো খবর
প্রতিদিন রাতের বেলায় এই নিশুতি বনে
ঝি ঝি পোকাদের ডাক শুনতে পাই।
আমার কোলের ছোট্ট শিশুটি
যে আমাকে না দেখতে পেয়ে
এ ঘর ও ঘর ছুটে বেড়াতো
সে হয়তো আজ অনেক বড় হয়েছে
যে মেয়েটি আধো আধো বুলিতে নামতা পড়তো
সে হয়তো আজ একা একা বৃষ্টিতে ভিজতে শিখেছে।
ও পথিক একটু দাঁড়াও বলতো
আমি কী আত্মা নাকি মৃতদের ফসিল।
এখানে শুয়ে শুয়ে আমি মেঘেদের ডাক শুনি,
বাতাসের শো শো শব্দ শুনি,
জংলি ফুলের তীব্র ঘ্রাণ আসে ভেসে।
প্রতিদিন এখানে ছোট্ট একটি মেয়ে
দোলনায় দোল খায় আর ছড়া গান গায়,
আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি তার গান
আর তার চুল থেকে ভেসে আসে শর্ষে ফুলের ঘ্রাণ।
জানো আমার বুকের ভেতর একটা নদী আছে
তার ভেতর মাঝে মাঝে শুন্যতার ঢেউ আসে ভেসে।
আজ দুই যুগ হলো কেউ আমার নেয়নিকো খবর,
আমার পায়ের ছাপ লাগা সেই উঠোনে এখনো কী
পা পিছলে কোমর ভাংগে সবুরের বাপ।
গভীর রাতে জলের উপর ঝরে পড়ে কী বৃষ্টির ফোটা।
আমার কাঁচা হাতের লেখা চিঠিগুলো
কী এখনো আছে তেমন।
জানো পথিক এ পৃথিবী বড়ই নিঠুর
কেউ মনে রাখে না, কিছু মনে রাখে না
মুছে ফেলে মনের পৃষ্ঠা থেকে।
মানুষ কী আসলে সব ভুলে যায়
নাকি ভুলে যাওয়ার ভান করে।
জানি একদিন তুমিও রবেনা পথিক
শুধু জেনে রেখো এ পৃথিবীর বুকে
রয়ে যাবে কিছু স্মৃতি আর বৃষ্টি ভেজার গল্প।