একদা তাহাদের পহেলা বোশেখ ছিল
সকালের আকাশ ভেঙে এসেছিল স্নিগ্ধ আলো
পথে পথে ছড়ানো ছিটানো ছিল
গাদা গোলাপের পাপড়ি
এখানে এই মরা বিলের ধারে ঝাকে ঝাকে পানিহাস
উড়ে এসে গেয়েছিল স্বাগত সংগীত,
প্রকৃতিকে এঁকেছিলাম আমি কাচা ধানের রঙে।
একদা তাহাদের পহেলা বোশেখ ছিল
শিশুর শুভ্র হাসির মতো
সেজেছিল আমার অবলা প্রকৃতি
উড়কি ধানের মুড়কি, সন্দেশ আর বাতাসার
মিঠে স্বাদে কখনোবা আনমনে চুল দুলিয়ে দুলিয়ে
নেচেছিল ফোকলা দাঁতের ছোট্ট মেয়েটি
ওখানে ওই বট গাছের তলে খেলনার কারিগর
সাজিয়েছিল ঢোল, বাদ্যি, বাঁশি আর ডুগডুগির পসরা
আকাশে বাতাসে এক নরম সুর খেলা করতো সেদিন
একদা তাহাদের পহেলা বোশেখ ছিল
কাচা পেয়াজের ঝাঝালো গন্ধে আর ভাজা ইলিশের
অমৃত কাটায় লেগেছিল এক মৌমৌ সুস্বাদ।
এখনো পহেলা বোশেখ আসে
সংকোচের ঝাঝর বাজিয়ে
মানুষের মুখ থেকে হারিয়ে গেছে হাসি
শুকনো হয়ে আছে কৃষাণীর মুখ
সেবক, সেবিকা, পুলিশ, প্রহরী চেয়ে আছে
শোকার্তের মুখে, মরাদের দেহ গুনে গুনে দিন
কাটছে কবরির।
এতো আমার কাচা ধানের রঙে আঁকা সেই বাংলা নয়
এতো আমার মানুষের পদচিহ্ন পড়া ধূ ধূ প্রান্তর নয়
এরকম রিক্ত ধূসর বাংলায় তবে
উল্লাস হোক আজ, উল্লাস করো।
সেবিকার উল্লাস হবে প্রতিদিন রোগীনির আরোগ্যে
প্রহরীর উল্লাস হবে প্রতিদিন বিনিদ্র নিরাপত্তায়।
আজ ঘরে ঘরে, মাঠে ময়দানে পদচিহ্ন নেই
নেই আকাশ ভেঙে ছুটে আসা মেঘের আস্ফালন
নেই চৈত্র দিনের শেষে তে তে উঠা মাটির উত্তাপ।
হে পথিক, হে যুবা, হে শিশু
আমি নিজেকে নতুন করে সাজাবো বলে
দিয়েছি ক্ষনিক বিরাম
তুমি আবার আসবে, হাসবে, খেলবে
এই বাংলার জল কাদায়
তোমার সুরেলা কন্ঠে আবারো গাইবে তুমি
বোশেখের গান- এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।
রচনাকালঃ ১লা বৈশাখ, ১৪২৭.