*******************
আজ ইচ্ছে হচ্ছে , এমন একজনকে নিয়ে আলোকপাত করার, যাঁকে অনেকেই নাম দিয়েছেন কবিদের কবি হিসাবে। তিনি হলেন বাংলাভাষার অন্যতম প্রচারবিমুখ কবি বিনয় মজুমদার । বিনয় মজুমদারকে ডাকা হতো কবিদের কবি রূপেই । কবিদের কবি মানে কি? উত্তর হলো -কবিদের কবি হলেন তিনি - পাঠকরা ছাড়াও অন্য কবিরা যাঁর লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়েন এবং কবিতা লেখা শিখেন । অর্থাৎ পরের প্রজন্মের কবিরা যাঁর কবিতা থেকে প্রশিক্ষন নেন কবিতাকে জানার ও লেখার ক্ষেত্রে ।
নিজের পেশাগত জীবনে বিনয় মজুমদার একজন প্রথম শ্রেনীর প্রকৌশলী ছিলেন। কিন্তু সারাজীবন করেছেন গণিতের চর্চা, আর জীবন ব্যাপী সাধনা করেছেন কবিতার ।
চিরকুমার সভার আমরণ সদস্য তিনি - খুব খ্যাপাটে স্বভাবের মানুষ ছিলেন তিনি, শেষ জীবনে হারিয়ে ফেলেছিলেন মানসিক ভারসাম্য । তাঁর কবিতার বহু পংক্তি কিংবদন্তী হয়েছে - ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শ্লোগান হিসাবেও ।
তাঁর বিখ্যাত কবিতা গ্রন্থ ফিরে এসো চাকা - একটি বহুল পঠিত কবিতার বই । মনে করা হয় যে, তিনি জীবনে কোন নারীর প্রেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন -- এবং পরবর্তীতে সেই নারীকে নিয়ে তাঁর অনেক কবিতা -- আর সেই নারীর নাম তিনি দিয়েছেন কবিতায় 'চাকা' রূপে । ভালবাসা দেয়া তাঁর মতে শ্বাশ্বত ও সহজ দান । ভালবাসা নিয়ে নারী যায় চলে আর কবিই হন বিরহে যন্ত্রণাদগ্ধ । লীলাময়ী লীলা করেই পগারপাড় । সেই যন্ত্রণার ভাগী হতে সেই ভালবাসার পাত্রী আর থাকে না কাছে । সেই বিখ্যাত গ্রন্থ ফিরে এসো চাকা'র একটি অনিন্দ্য কবিতা 'ভালোবাসা দিতে পারি' -- তুলে দিলাম আসরের কবিদের জন্যেই ।
বিনয় মজুমদার এর কবিতা
ভালোবাসা দিতে পারি
---------------
ভালোবাসা দিতে পারি,তোমরা কি গ্রহনে সক্ষম?
লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝ'রে যায়-
হাসি,জোৎস্না,ব্যথা,স্ম্ তি, অবশিষ্ট কিছুই থাকে না।
এ আমার অভিজ্ঞতা।পারাবতগুলি জোৎস্নায়
কখনো ওড়ে না;তবু ভালোবাসা দিতে পারি আমি।
শাশ্বত সহজতম এই দান--শুধু অন্কুরের
উদগমে বাধা না দেয়া,নিষ্পেষিত অন্যলোকে রেখে
ফ্যাকাশে হলুদবর্ন না-ক'রে শ্যামল হতে দেয়া।
এতই সহজ, তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি
মৃত্যুর প্রস্তর,যাতে কাউকে না ভালবেসে ফেলি।
গ্রহনে সক্ষম নও।পারাবত, বৃক্ষচুড়া থেকে
পতন হলেও তুমি আঘাত পাও না,উড়ে যাবে।
প্রাচীন চিত্রর মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চ'লে যাবে,ক্ষত নিয়ে যন্ত্রনায় স্তব্ধ হব আমি।