***************
কবিতা লেখায় শব্দ ও ছন্দের ব্যবহারে অতি নিপুণ প্রয়োগে পারদর্শী কবি বিষ্ণু দে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসীদের জীবনের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল । সাঁওতাল এলাকায় থেকে তিনি ওদের জীবন সম্পর্কে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করেন, লিখেছেন অনেক কবিতা সাঁওতাল ও ছত্তিশগড়ী আদিবাসীদের নিয়ে ।
তাঁর কবিতায় শ্রেণী-সমাজ এর বৈষম্য ও মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নানান টানাপোড়েন নিয়েও কবিতা ঊঠে এসেছে তাঁর কলম থেকে । অপরদিকে তিনি প্রখ্যাত ইংরেজী ভাষার কবি এলিয়ট এর রচনায় অত্যন্ত অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত ছিলেন ।
একদিকে শ্রেণী সমাজের বৈষম্য নিয়ে গভীর যাতনাবোধের তাড়না – অন্যদিকে নান্দনিকতার কবি এলিয়টের মায়ায় হাবুডুবু -- এই দ্বিমাত্রিক আত্মসংশ্লেষনের মধ্যেও তিনি তাঁর জন্মভূমির প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে আন্তরিক ও সৎ ছিলেন ।
এলিয়ট সহ বেশ কিছু তৎকালীন বিখ্যাত বিদেশী কবির কবিতা তিনি অনুবাদও করেছেন । তিনি প্রকৃতির নৈসর্গিক সুন্দরতার পূজারী ছিলেন – তাই হয়তো চিত্রশিল্পের প্রতি তাঁর বিশেষ মমত্ব ছিল । বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায় এর সাথে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল । তিনি যামিনী রায়ের চিত্রমালা ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকলা ও ভারতীয় বিচিত্র রকমের চিত্রকলা নিয়ে ইংরাজী ও বাংলায় গ্রন্থ লিখেছেন ।
তাঁর লেখা আর একটি কবিতা যা আমার খুব পড়তে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝেই; কবিতাটি আসরের কবিদের জন্যে শেয়ার করলামঃ
তুমিই মালিনী
---------
কবি বিষ্ণু দে
----------
তুমিই মালিনী, তুমিই তো ফুল জানি ।
ফুল দিয়ে যাও হৃদয়ের দ্বারে, মালিনী,
বাতাসে গন্ধ, উৎস কি ফুলদানি,
নাকি সে তোমার হৃদয়সুরভি হাওয়া ?
দেহের অতীতে স্মৃতির ধূপ তো জ্বালি নি
কালের বাগানে থামে নি কো আসা যাওয়া
ত্রিকাল বেঁধেছ গুচ্ছে তোমার চুলে,
একটি প্রহর ফুলহার দাও খুলে,
কালের মালিনী ! তোমাকেই ফুল জানি,
তোমারই শরীরে কালোত্তীর্ণ বাণী,
তোমাকেই রাখী বেঁধে দিই করমূলে
অতীত থাকুক আগামীর সন্ধানী -
তাই দেখে ঐ কাল হাসে দুলে দুলে ।
(চলবে)