ঝুম বৃষ্টি পড়ছে, কোথাও কোন জনমানব নেই, মাঝে মাঝে একআধটা হুডতোলা রিক্সা সোঁ সোঁ করেই বেরিয়ে যাচ্ছে । আপাদমস্তক কাকাভেজা হয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে প্রবর্তক রাস্তার মোড়ে। হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা । সে-ও কাকভেজা হয়ে লোটপাট ।
এমনিতেই এমন পড়ন্ত বিকেলে লোকজন খুব একটা দেখা যায় না, তার উপর এমন মুষলধারে বৃষ্টি । আহ, অনেক কষ্টে দুপুরের খাবারের টাকাটা দিয়েই কিনেছে এই একগুচ্ছ রজনীগন্ধা । এমন দাম কেনো এই ফুলটার ! ভেবেছিলো একশোটা গোলাপ কিনবে, কিন্তু টাকা ছিলো না । শর্মী নিশ্চয়ই খুউব খুশী হবে - রজনীগন্ধা ওর খুব প্রিয় । কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে যা হয়েছে তা কি আর দেয়া যাবে হাতে !
নাহ, আর বুঝি সে এলো না, আসার সময় পেরিয়ে গেছে তাও এক ঘন্টা হলো, হাতের কাছে কোন ফোন নেই যে খবর নেবে - সে কি আটকে গেলো কোন কারণে ! দাঁড়াতে দাঁড়াতে পায়ে গিট ধরে গেলো, আর পারছে না । ঠাণ্ডা হিমেল বাতাসে ভিজে শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়েছে । জ্বর আসছে না তো? হতেও পারে, তার আবার ঠাণ্ডার ধাত, একটুতেই জ্বরে পড়ে যায় ।
না, সে আর আসে নি, তুমুল জ্বর নিয়ে বাসায় ফিরে কম্বল মুড়ি দিয়ে সে শুয়ে পড়লো । টানা তিন দিন জ্বরের ঘোরে অভূক্ত, নির্জলা, জ্ঞানে-অজ্ঞানে চলে গেছে সে বুঝতেই পারে নি । জ্বরের স্বপ্নের ঘোরে ফিরে ফিরে শর্মী কিন্তু এসেছে, আর বারবার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে জ্বরের ঘোরে সে ওকে বলছে - হিস্-স-স ---
'Please hold your tongue -- let me love,
ওরে তোরা একটুকু চুপ কর, ভালবাসিবারে দে আমারে অবসর'।
এখানে লাবণ্য কোথায় !! সে কি অমিত হয়ে গেছে !!
আলখাল্লা বুড়োর 'শেষের কবিতা' উপন্যাস তার পুরোই মুখস্থ -- শুধু সে কেনো- দুনিয়ার তাবৎ প্রেমিকেরই - !!
'কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও ---" ?
মহাকালের যাত্রায় লাবণ্য কোথায় হারিয়ে গেছে, সে কিন্তু মনে মনে অমিত সেজে সারাটি জীবন কাটিয়ে দিলে, নাহ- তার জীবনে কোন কেটি ও আসে নি - হতভাগা সে এক দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান - ।
প্রেমের ভূত মাথায় চেপেছিল দূরন্ত একুশেই -- সেই ভূত আজো সে বয়ে বেড়ায় গোপনে -- শেষের কবিতার অমিত সেজে --- অজপাড়া গাঁয়ের কৃষকের সন্তান -- সুজন । সে জানে আজ নিশ্চিত -লাবণ্যরা কখনো জীবনে আসে না , ওরা আসে হারিয়ে যাবার জন্যেই !!
কান পেতে থাকলে জানা যায় - আশেপাশে চারিধারে অনেক অমিত কিন্তু গোপন দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরবে ঘুরে বেড়ায় - চোখ মেলে চাইলেই ওদের চেনা যায় !!
------------------------------------------------------
[**এই লেখাটী দিলাম সেই হতভাগ্য ভ্রাতৃপ্রতিম "সুজন" কে, যে আমাকে চোখের জলে শুনিয়েছিল এক অনন্য একান্ত ইতিহাস **] ( সঙ্গত কারণেই নামগুলো ছ্দ্মনাম)