মন খারাপের সন্ধ্যে নেমেছে আজ ভিজে রাস্তার বুকে ;
কান ভরানো ঝিমঝিম শব্দটাও হাসছে সেই মন খারাপ শুঁকে ;
ফোঁটা ফোঁটা বিন্দুকণাও যেন হাত বাড়িয়ে ধরতে চায় আমায় ।
শুধু আমিই যেন হয়ে আছি নির্বাক !
খোলা আকাশের নিচে ঘাটের কাদামাখা শেষ সিঁড়ি ডুবে,
পিছল করেছে খানিক ।
শেঁওলা ধরা মাটি বুক চিতিয়েছে আধভাঙা ইঁটের উপর !
আমি পা বাড়াই ।
চমক ভাঙে গোড়ালিতে নদীদেহের স্পর্শ পেয়ে,
বৃষ্টি-কান্না ভেজা গাল বেয়ে জল গড়ায় চিবুক বেয়ে
তবু আমি হয়ে আছি নির্বাক !
তালুমুঠো করা সেই পাতার উপর খুঁজে যাই সেই স্পর্শ,
যে স্পর্শ হাজার তিরস্কার সৃষ্টির ঔষধরূপে ধরা দিয়েছিল ;
সেই তিরস্কার আজ গাল থেকে মুছে গিয়েছে,
কিন্তু অক্ষত থেকে গিয়েছে অন্তঃকরণের ভিতর ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুদাগ হয়ে ।
তবু আমার কান্না নেই, নেই কোনো অভিযোগ,
সেই স্মৃতিরোমন্থনের দায় আজ যেন খুব বেশি ।
তাই হয়ত আজ আমি স্বাভাবিক নই ।
জোরালো, তীব্র চেনা সেই প্রেম শব্দ -বাঁধন হতে আজ আমি হয়েছি মুক্ত ।
আজ কোনো কথা নয়, শুধু চেয়ে চেয়ে থাকা
নির্বাক হয়ে থাকা !
হাজারো শ্লীলতা-অশ্লীলতার মাঝে ঐ যে শব্দটা - " ভালোবাসি "
আজও যেন শুনতে চেয়ে ছটফট করি !
বুকে দামামা বাজে, মনে হয় এখুনি হবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া শেষ ;
কিন্তু মরতে চাইলেই তো আর মরা যায় না !
যন্ত্রনা মুক্ত সেই নিঃস্বার্থ একবাক্যটি শুনতে পাওয়াই যেন আমার শেষ ইচ্ছে -
মৃত্যু আসুক, কিন্তু সেই শব্দটাকে নিয়ে আসুক যাতে চিতাকাঠেও বর্ষণ হয় গোলাপফুল !
আমার সেই অক্ষয়, অনন্ত শয্যা যেন সেই শব্দ ছুঁয়ে আসে ।
আজ দিনান্তে কান্নাভেজা সুর কানে অবিরাম চলেছে যেন বেজে,
আকাশের ভিড় ঠেলে জলধরেরা বুকে বেঁধে আনে ;
সে সুর আমার জন্যই যেন ভাসে !
একলা করা বাতাস, পাগলা হয়ে এলোমেলো চুলে আঁচড় কাটে ;
সেই এলোমেলো বাতাস আমাকেই যেন ছুঁতে আসে !
সহসা শুনি মাঝ আকাশের নিচে স্রোতবহা মৃদু কলরব ।
অজান্তে ধেয়ে আসা বর্ষা-বন্য বাতাসের দল ছিনিয়ে নেয় ঐ শেষ সম্বলচিহ্ন !
আমি বাধা দিতে যাই ।
শেঁওলাতে পা যায় পিছলে !
তবু নির্বাক হয়েই থাকি ।
এখন আমার ঘুমের প্রয়োজন !