হঠাৎ শুনি দত্ত বাবু পৌঁছে গেছেন কাতার।
আমিও তাই ভারত মহাসাগর থেকে সাঁতার
দিলাম কিন্তু কোথায় সাগর! শূন্যগর্ভ বিবর!
আর সেখানে জাল পেতেছে প্রকাণ্ড এক ধীবর।
ধ্যাত্তেরিকা! ধীবর কোথায়, দৈত্য ভয়ংকর!
আমি ভয়ে জপতে থাকি মা কালী-শংকর।
দাঁত কেলিয়ে দৈত্য বলে ছাড় না ওসব, ধুস্!
আমি তো তোর বন্ধু অতি, নাম আমার কুদ্দুস।
কাতার যাবি? কী আর এমন জটিল কঠিন কাজ?
এ-এক মাসে সঙ্গ দেবো, চলবে তোরই রাজ।
টিকিট ফিকিট! ছাড় না ওসব, দৈত্য যদি দোস্ত।
কাতার-আমীর সঙ্গ দেবে; এবার ওরাই হোস্ট।
চোখ বুজে যেই আরাম করে বসেছি ওর পিঠে।
এক নিমেষে বসিয়ে দিলো ভি আই পি-দের সীটে!
ষ্টেডিয়াম কেমনরে ভাই, বেদুঈনের তাবু!
দেখে দেখে চোখ জুড়োলো, একটু হলাম ভাবুক।
চলল খেলা, চলছে খেলা, চলবে পুরো মাস।
কার যে কপাল যাচ্ছে খুলে, কার যে সর্বনাশ,
সময় জানে। ওসব নিয়ে আমার কী আর তাড়া!
দেখতে যখন পৌঁছে গেছি, প্রিয় দলটি ছাড়া
সবাই যেন হেরেই চলে; ওসব হবে পরে;
এখন কিছু গল্প বলি, পড়ল যা নজরে।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখি লুঙ্গি পরিধানে
রফিক মিয়া ধোঁয়া ছেড়ে বেদম হুক্কা টানে।
পাশেই বসে খাচ্ছে কাঁচা লঙ্কা পিঁয়াজ হুড়ুম
বাংলাদেশের অমল মাঝি। ম্যাচ হল যেই শুরু
কী দুর্দান্ত! আদ্য অন্ত গিলতে থাকি চোখে।
হঠাৎ দেখি ফটকা ফটিক জোড়সে বিড়ি ফোঁকে!
কয়লা-কালু বাংলা বেচে, গুটখা বেচে শ্যাম।
বলব কী আর কাতার গিয়ে আর কী কী দেখলাম।
পাশে বসে ব্যাজার মুখে রবার্তো কার্লোস,
কেয়ার তাকে করিনি তাই মনে কী আফসোস!
আমার ভীষণ ব্যস্ত সিডিউল, ডাক ছাড়ি কুদ্দুস...
ভাল্লাগে না, বাড়ি যাব; এতেই বহুত খুশ।
ফাইনালটা আজ করে দে, বাদবাকি হোক পরে!
পরিবারের জন্য যেন মনটা কেমন করে।
দৈত্য বলে, তথাস্তু দোস্ত; লুসাইল আইকনে
উঠল জমে হাড্ডাহাড্ডি, আঁচ বড় গণগণে।
প্রিয়দলের অধিনায়ক হাতে বিশ্বকাপ
আমার দিকে নাড়িয়ে বলে আর নেবেন না চাপ।
কে জিতেছে! বলতে সে-সব দোস্ত করেছে মানা।
সময় হলেই দেখতে পাবে, সবই যাবে জানা।
ভাগ্যি, কিছু কল্পনাতে, স্বপ্নে দেখা বাকি।
কদিন বরং রাত জাগি আর আবেগ নিয়েই থাকি।