ফিরিয়ে দাও -
সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী
আমি কি এই জীবন চেয়েছিলাম ?
আমি কি এই শহর চেয়েছিলাম ?
এই নৈঃশব্দের নিষ্ঠুরতা,
আমি কি চেয়েছিলাম ?
আমার খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে
মাকে দেখতে যেতে ইচ্ছে করছে।
আমার ডুপ্লেক্স, সাজানো বাগান
কাঠের সিঁড়ি,
আমার বারান্দা, আঙিনার বৃক্ষরাজি
খুব ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে |
আমার ভাতিজিদের মিষ্টি হাসি আমি কতদিন দেখি না।
বৌদির হাতের কষা মাংস
দাদার খালি গা, লোমশহীন বুক
আমি কতদিন ছুঁয়ে দেখি না।
আমি তো ঘরে থাকার মানুষ নই
সকাল থেকে সন্ধ্যে
সন্ধ্যে থেকে রাত
রাত থেকে গভীর রাত
কাজ নিয়ে ছুটে চলার মানুষ আমি।
আনন্দে থাকার মানুষ আমি।
এমন ঘরবন্দি জীবন তো চাইনি
এমন অলস অবসর চাইনি।
এরকম বেঁচে থাকাও চাইনি |
কেউ কি আছো? শুনতে পাচ্ছো?
আমার অফিস খুলে দাও।
আমাকে আমার মন্দিরে হাঁটতে দাও উপার্জনের
প্রতিটা দ্বার উন্মুক্ত করে দাও।
আমাকে আমার মতো করে বাঁচতে দাও |
চীনের ভুল না আমেরিকার ভুল
দিনশেষে কী হবে, আমি জানতে চাই না।
জানার সময় নাই।
আমাকে আমার সময় ফিরিয়ে দাও।
আমার সেই আগের দিন ফিরিয়ে দাও
ফিরিয়ে দাও আমার
সেইসব মিষ্টি রাত ,
ঘুমভাঙানো পাখির গান
আমার ময়নার শীষ ,
মা মিষ্টি ডাক
বোজোর ঘেউ ঘেউ ,
ছাদে বৃষ্টির জলে ভেজা
বোজোর সঙ্গে খেলা আর খুনসুটি।
ঢাকার সেই চিরচেনা যানজট
হৈহল্লা , মিছিল, পুলিশের লাঠিচার্জ
হকার, মানুষের জটলা , এলোমেলো পাবলিক,
গাড়ির জানালায় ভিক্ষুকের টকটক,
ভাড়া নিয়ে যাত্রীর সাথে ড্রাইভারের বচসা
- এসব আমি ফিরে পেতে চাই।
এ আমার চির অভ্যস্ত কাঙ্ক্ষিত যাপন।
অনেক হয়েছে , আর না।
লকডাউন তুলে
এবার ফিরিয়ে দাও আমার শহর , আমার জীবন,
আমার বেঁচে থাকা,
আমার সংগ্রাম
আমার টিকে থাকা
আমার ভালবাসা
সব ফিরিয়ে দাও।
ঠিক যেমন ছিল আগের মতন
ঠিক ঠিক তেমনই ফিরিয়ে দাও |
দশ টাকার বাদাম কিনে
ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বর ধরে হাঁটতে হাঁটতে
সাতাশ নাম্বার আসতে দাও !
আমার স্বর্গে আমাকে কয়েকঘন্টার জন্যে
লকডাউন হতে দাও | স্রেফ কয়েক ঘন্টা ||
নিস্তব্ধতার শিকল ভেঙ্গে উল্লাসে উন্মাদনায়
আমাকে আবার ভাসতে দাও , আবার উড়তে দাও
আমার নিজস্ব ডানার আস্থায় ও আনন্দে।