কারাগারের ভিতরে পড়েছিল জোছনা
বাইরে হাওয়া, বিষম হাওয়া
সেই হাওয়ায় নশ্বরতার গন্ধ
তবু ফাঁসির আগে দীনেশ গুপ্ত চিঠি লিখেছিল তার বৌদিকে,
“আমি অমর, আমাকে মারিবার সাধ্য কাহারও নাই।”
মধ্যরাত্রির আর বেশি দেরি নেই
প্রহরের ঘণ্টা বাজে, সান্ত্রীও ক্লান্ত হয়
শিয়রের কাছে এসে মৃত্যুও বিমর্ষ বোধ করে।
কনডেমড সেলে বসে প্রদ্যুত ভট্টাচার্য লিখছেন,
“মা, তোমার প্রদ্যুত কি কখনো মরতে পারে ?
আজ চারিদিকে চেয়ে দেখ,
লক্ষ প্রদ্যুত তোমার দিকে চেয়ে হাসছে,
আমি বেঁচেই রইলাম মা, অক্ষয়”
কেউ জানত না সে কোথায়,
বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ছেলেটি আর ফেরেনি
জানা গেল দেশকে ভালোবাসার জন্য সে পেয়েছে মৃত্যুদন্ড
শেষ মুহূর্তের আগে ভবানী ভট্টাচার্য
পোস্ট কার্ডে অতি দ্রুত লিখেছিল তার ছোট ভাইকে,
“অমাবস্যার শ্মশানে ভীরু ভয় পায়,
সাধক সেখানে সিদ্ধি লাভ করে,
আজ আমি বেশি কথা লিখব না
শুধু ভাববো মৃত্যু কত সুন্দর।”
লোহার শিকের ওপর হাত,
তিনি তাকিয়ে আছেন অন্ধকারের দিকে
দৃষ্টি ভেদ করে যায় দেয়াল, অন্ধকারও বাঙময় হয়
সূর্য সেন পাঠালেন তার শেষ বাণী,
“আমি তোমাদের জন্য কি রেখে গেলাম ?
শুধু একটি মাত্র জিনিস,
আমার স্বপ্ন একটি সোনালি স্বপ্ন,
এক শুভ মুহূর্তে আমি প্রথম এই স্বপ্ন দেখেছিলাম ।”
সেই সব স্বপ্ন এখনও বাতাসে উড়ে বেড়ায়
শোনা যায় নিঃশ্বাসের শব্দ
আর সব মরে স্বপ্ন মরে না
অমরত্বের অন্য নাম হয়
কানু, সন্তোষ, অসীম রা…
জেলখানার নির্মম অন্ধকারে বসে
এখনও সেরকম স্বপ্ন দেখছে