যৌগিক বৈপরীত্য || সুমন শামসুদ্দিন
-------------------------------------------
ইদানিং আমি কিছুই লিখছি না!
কারণ, আমার মন এখন অনাবাদী, বিক্ষুব্ধ, ক্লিষ্ট!
আমার প্রণয়িনীরা অসহযোগ আন্দোলনে নেমেছে!
আকাশ পরেছে আজ অন্ধরঙা শাড়ি-
মেঘ নিরুদ্দিষ্ট, নক্ষত্ররাজিও পালিয়েছে কোথাও!
বিষণ্ণ নদী থমথমে, জলের গান নিমিলীত!
জোয়ার-ভাটা আর প্রবহণে মার্জিত স্তব্ধতা!
পালতোলা কোন নৌকো নেই,
নেই অদূরে ভেসে যাওয়া কোন মাঝির মন-হারানো সুর!
অনিষিক্ত ফুলবাগিচায় ঊষর রোদন
মৌমিতাদের গুনগুন নেই!
নেই রঙ-ছড়ানো প্রজাপতির চঞ্চলতা;
খুশবুহীন বিরহবীজন বিমর্ষ আজ!
উদ্যানে উদ্যানে আজ জোছনাবিহীন কালো সন্ধ্যা।
শালবন বিহারে শত-সহস্র জোনাকপোকা-
দীপ্তিহারানো শোকে অগভীর ঘুমে মুহ্যমান।
শুধু আমিই ঘুমাতে পারছিনা!
হিমালয়ের সমস্ত তুষার গলে শুভ্রতা লুপ্ত আজ!
এভারেষ্ট শৃঙ্গ বঙ্গ-উপসাগরের বেলাভূমিতে কুর্নিশরত!
প্রশান্ত মহাসাগরের মৎস্যকুল জলসমেত-
এন্টার্কটিকায় বিরামহীন হিমশীতল তন্দ্রাগত!
শুধু আমার চোখেই ঘুম নেই!
সিডনি অপেরা হাউজের কনসার্ট-হলে,
প্রথমবারের মতো আজ মঞ্চায়িত হতে যাচ্ছে-
মৃত-মানুষদের নাটক, “আমরা ভালোবাসা চাই”!
ছাব্বিশশত উনআশিটি সীটই বুক করা হয়েছে
কেবল কবিদের জন্য; শুধু আমিই টিকিট পাইনি!
ওয়েষ্টমিনিষ্টার এ্যাবে’র পোয়েটস্ কর্ণারে
পৃথিবীর সমস্ত কবিই মৌনাবৃত্তিতে নিমগ্ন!
সম্পূর্ণ অডিয়েন্স নিশ্ছিদ্র ঘুমে আচ্ছন্ন!
শুধু আমি একাই জেগে আছি নির্ঘুম!
আমাজনের গভীর অন্ধকার বনে বসে
আমি শুনতে পাচ্ছি বিগবেনের-
ঢং ঢং ঢং ঢং!
পৃথিবীর একনম্বর শান্তিপূর্ণ দেশ
আইসল্যান্ডে আজ থেকে শুরু হচ্ছে
মানবতাবিরোধী বিক্ষোভ!
পৃথবীর প্রথম মহাকাব্য “এপিক অব গিলগামেশ”-এর
সর্বশেষ প্রকাশনা রচিত হবে আজ-
অ্যাকাডিয়ান ল্যাংগুয়েজ-এর পরিবর্তে বাংলা ভাষায়!
নতুন সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করা হবে
শহিদ মিনারের বেদিতে;
সেখানে আমিই প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং একমাত্র দর্শক শ্রোতা!
অনুষ্ঠান শেষে বিশ্বমানচিত্রে
বঙ্গদেশ নামক বদ্বীপের নতুন পরিচয় হবে-
একক জনসংখ্যা বিশিষ্ট একমাত্র দেশ!
আর আমার বিক্ষুব্ধ হৃদয় হবে শান্ত, ঘুমন্ত!