মায়া
____সুমন প্রধান
মায়া মানে সেই পুরোনো বারান্দা--
যেখানে একদিন কেউ বসেছিল___
তার শরীরের উষ্ণতা নেই___
তবু চেয়ারটা আজও নড়ে ওঠে বাতাসে।

মায়া মানে পুরোনো ছবির কোণে আঙুল বুলিয়ে দেখা__
যেখানে মুখের রেখা ঝাপসা---
তবু চোখের ভাষা স্পষ্ট বোঝা যায়।

মায়া এক নীরবতা___
যা ভাঙে না, একটা অসমাপ্ত গল্প--
যার শেষ পৃষ্ঠাটি কেউ লেখেনি।

বিদায়ের বেদনায় মায়া,___
বিদায়ের শেষ মুহূর্তে চোখের কোণে জমে থাকা জল__
যা গড়িয়ে পড়ে না— এটাই মায়া।

কথা শেষ হয়ে গেছে__
পথ ভিন্ন হয়েছে,
তবু মনে হয়___
একবার যদি আরেকটু কাছে আসতে পারতাম!

শুধু এক মুহূর্ত—
একটা শেষ কথা,
একটা শেষ ছোঁয়া,
একটা শেষ বার ফিরে তাকানো—
কিন্তু সময় আর ফেরে না।
তবু মায়া ফিরে ফিরে আসে__
নিঃশব্দ বিদায়ের আর্তনাদ হয়ে!

অনন্ত অপেক্ষার সুরে মায়া __
তুমি কি জানো__
কেউ কেউ অপেক্ষা করে চিরকাল?
তারা জানে, কেউ ফিরবে না___
তবু প্রতিটি সন্ধ্যায় দরজার ফাঁকে আলোর রেখা রেখে দেয়।

মায়া মানে প্রতিটি শীতে একটা অতীতের উষ্ণতা খুঁজে ফেরা__
বর্ষার রাতে পুরোনো সুর শুনে চোখ বন্ধ করে হারিয়ে যাওয়া।

মায়া হলো একলা রাস্তার মোড়ে হঠাৎ চেনা কোনো গন্ধে চমকে ওঠা,
হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাওয়া—
কিন্তু সেখানে কেউ নেই।

মায়া কখনো আসবে না__
তবুও তার অপেক্ষা এ মন ছাড়বে না!

অপরিচিত অথচ চিরচেনা মায়া----
মায়া শুধু প্রিয়জনের জন্য নয়__
মায়া কখনো এক অচেনা মুখের জন্যও হয়।
ট্রেনের জানালায় দেখা এক মুহূর্তের চোখাচোখি,
কিংবা ভিড়ের ভেতর একজনের মৃদু হাসি।

মায়া কখনো গল্প তৈরি করে না,
তবু কিছু অনুভূতি রেখে যায়।
যার নাম নেই,
যার ঠিকানা নেই,
তবু বুকের ভেতর একটা অনুনাদ জাগিয়ে তোলে!

মা-বাবার প্রতি মায়া___
মায়া মানে শৈশবের সেই কোমল হাত___,
যে আঙুল ধরে হাঁটতে শিখিয়েছিল।
মায়া মানে মায়ের চোখে অকারণ শাসনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা__
বাবার কঠোর কণ্ঠের ভিতর গভীর উদ্বেগের সুর।

মায়া মানে দূর প্রবাসে বসে বাড়ির খাবারের গন্ধ মনে পড়া__
বাবার পুরোনো চিঠির হাতের লেখায় চোখ রেখে স্নেহের উষ্ণতা খুঁজে ফেরা।

মায়া মানে প্রতিবার বাড়ি ছাড়ার সময় একটা অলক্ষ্য টান__
যে ফিরে আসতে বলে—
     বারবার, বারবার!

শেষ কথা___
মায়ার কোনো নির্দিষ্ট রূপ নেই_
কখনো সে স্মৃতি,
কখনো বিদায়,
কখনো অপেক্ষা,
কখনো অজানা অনুভূতি।
সে একবার হৃদয়ে জমলে___
তার থেকে মুক্তি নেই—
সে ভালোবাসার চেয়েও গভীর__
আর বিস্মৃতির চেয়েও প্রবল!