পহেলা বৈশাখে উঠত সূর্য, কৃষকের মুখে হাসি,
হালখাতায় খোলা হতো নতুন খাতা—
পুরোনো দেনা-পাওনা মুছে, শুভ সূচনার আশ্বাস।
ব্যবসায়ীর দাওয়াতে গ্রাহকের হাতে থাকত মিষ্টি,
এই ছিল শুরু, এই ছিল শ্রদ্ধা।
চৈত্রের শেষে জমিনে শেষ হাল টানত কৃষক,
বৈশাখে তার ঘরে আসত ধান,
সেই ধানের ঘ্রাণে মাতত নবান্ন—
ঘরে পিঠা, উঠোনে আলপনা, গানে মিশে যেত গরুর গাড়ির ছন্দ।
বৈশাখী মেলা ছিল এক গ্রামবাংলার প্রাণ,
নকশিকাঁথা, বাঁশের বাঁশি, লাঠিখেলা আর বাউলের তান।
প্রকৃতি ছিল সাথী—
বর্ষা চাইতে মাটি, বৃষ্টির আহ্বানে থাকত প্রার্থনা।
নতুন জামা মানে ছিল ধুতি-শাড়ি,
কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিল আত্মীয়তা আর হৃদয়ের ধ্বনি।
কিন্তু আজ?
আজ নববর্ষ সাজে শহরের হাল,
ব্যস্ত ক্যাফেতে বুকিং, ইনস্টার ফ্রেমে বন্দি হাঁসি।
হালখাতার জায়গায় ডিজিটাল ডিসকাউন্ট,
ধানের পরিবর্তে খাবারের ছবি,
আর সংস্কৃতির জায়গায় শুধুই ডিজে-তালের ছড়াছড়ি।
কোথায় সেই নবান্ন, সেই মাটির ধ্বনি?
গ্রামের কৃষক আজ টিভিতে দেখে নববর্ষ,
যেখানে তারই ঘাম ভুলে গিয়েছে দেশ—
শুধু মুখে বলে, “ঐতিহ্য ভালোবাসি।”
তবু এই মাটির ঘ্রাণ মুছে যায় না,
যে শিকড় গাঁথা ফসলের সুরে,
সেই গান আজও বাতাসে কান্না হয়ে বাজে।
আসুন, আমরা ফিরি সেই নববর্ষে,
যেখানে শহর নয়, মাটি বলত কবে হবে উৎসব।
যেখানে সাজ নয়, হৃদয় হোক শুভেচ্ছার রঙ,
আর স্মৃতির জন্য নয়—এই প্রজন্মের জন্য ফিরুক
কৃষকের গর্বিত পদধ্বনি।