লেখা বারণ। তাও লিখছি। লিখলে মনের ভাব প্রকাশ হয় তাই লিখছি।
একটি গান আমার খুব পছন্দ।
“এই করেছ ভালো নিঠুর হে এই করেছ ভালো”।
যারাই রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালোবাসেন তাদের সকলেই এই গানটি শুনেছেন। যারা ভালোবাসার না তারাও কখনও না কখনও শুনেছেন।
আঘাতের মতো পবিত্র আর প্রেরণা দানকারী আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ হতে পেরেছিলেন তার কারণ তিনি মৃত্যু নামক আঘাতকে কাছ থেকে দেখেছেন। নিজে এত আঘাত পেয়েছেন তাই সকল আঘাত এর ওপরে উঠতে পেরেছেন।
আঘাত পেয়েছেন যত, ততো তিনি শক্ত হয়েছেন। যত শক্ত হয়েছেন ততই সত্য ক্রমশ তাঁর কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছে। আঘাতের মাধ্যমে ঈশ্বর আমাদের কাছে নেমে আসেন, আমাদেরকে স্পর্শ করেন।
তাঁর রচিত এই গানটিতে সেই কথাটি প্রকাশ পায়।
একটি প্রবাদ বাক্য সকলেই শুনেছেন
“যে করে আমার আশ আমি করি তার সর্বনাশ।”
সর্বনাশ না হলে, যৌবনে ঘর না পুড়লে,সেজনার দেখা পাওয়া সম্ভব নয়।
রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখেছেন যে তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে গেছেন। তার প্রমান আমরা তাঁর লেখনীর মধ্যে দেখতে পাই।
১৯১0 সালে লেখা এই গানটিতে আমরা সেই মানুষটিকে দেখতে পাই যিনি নিজের মেয়ের অসুস্থতা ভুলে গিয়ে অনায়াসে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আলোচনাসভা নিজের ঘরে বসাতে পারেন।
ভেবে দেখুন তার মধ্যে কি অসীম সাহস আর অদম্য ইচ্ছা থাকতে পারে যিনি যেচে যেচে আঘাত কে নিজেকে নিজের কাছে আসতে বলেন। তিনি নিরাকার পরম ব্রহ্মের কাছে চেয়েছেন ভালোবাসা নয়, কোন আশীর্বাদ নয়, প্রার্থনা করেছেন তাঁর পরশ।
এটাই তো সত্যি। সুখের সময় আমরা সকলেই সেযনার কথা ভুলে থাকি ।একমাত্র আঘাত পেলে তবেই আমরা তাঁর কথা মনে করি। যদি আঘাত এর মাধ্যমেই তার পরশ আসে তাহলে আঘাত ই শ্রেয়।
রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন দুঃখের আগুনে পুড়িয়ে ঈশ্বর তাঁকে সোনা বানাতে চান। তাই তিনি নিরাকার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে এই গানটি লিখেছেন বলে আমার মনে হয়। বড়ই সরল,বড়ই সত্য এই গানটি। দুঃখের আগুনে পুড়ে তবেইতো রবীন্দ্রনাথ নিজের মাধুরী সকলের মধ্যে বিলোতে পেরেছিলেন।
গানটি কোন পর্যায়ের তা আমি জানিনা কিন্তু গানটিতে রবীন্দ্রনাথ সে সরল সত্য সহজভাবে বলেছেন এবং যে প্রার্থনা তিনি করেছেন তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি। প্রার্থনা করি আমিও যেন একদিন দুঃখের আগুনে পুড়ে সেজনার পরশ লাভ করতে পারি।