ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখি আমি এক মস্ত বড় রাজা।
আমার সামনে হাটুঁগেঁড়ে হাত জোড় করে সব প্রজা।
সবাই প্রচণ্ড ভয়ার্ত,শরীর কম্পমান,নতজানু মাথা।
ঘুম ভেঙ্গে দেখি, আমার হাত লোহার শিকলে বাঁধা!
ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখি আমার মাথায় মুকুট, হাতে রাজদণ্ড।
ময়ুর সিংহাসনে বসে আমার সে কি গর্জন! রেগে আছি প্রচণ্ড।
অসহায়,দুর্বল,সম্বলহীন প্রজাদের চোখেমুখে স্পষ্ট আতঙ্ক।
কারো পেটে নেই ভাত,মুখে নেই কোনও কথা।
ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমার হাত লোহার শিকলে বাঁধা!
ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখি সুন্দরী রমণীরা ব্যস্ত আমার
সেবা সুশ্রসায়।
তাদের ফর্শা সুন্দর হাতে রিনঝিন চুড়ির শব্দে উষ্ণ ছোঁয়া
আমার পায়ে,হাতে,মাথায়।
ঘুঙুর পায়ে অপ্সরীর নৃত্য,বাদক বাজায়
তানপুরা,তবলা,বেহালা।
সুন্দরী নারীদের চোখে মাস্কারা, চাহুনিতে ইশারা,
হাতে মদের পেয়ালা।
আমার রংমহলে ঝারবাতির আলো,পর্দাদেয়া জানালা,
মখমলের গালিচা আছে পাতা,
ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমার হাত লোহার শিকলে বাঁধা!
ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখি আমার সম্মুখে কতো মহাজন,
কতো উপঢৌকন
আমার শরীরে ঝলমলে মনিমুক্তাখচিত রাজার পোশাক
রাজসভার কোথাও স্বর্ণমুদ্রার স্তুপ,কোথাও হীরাযোহরতের
পাহাড় যেন সাত রাজার ধন,
সব আমার জন্য,আমারই সব,আমার হাতেই যতো ক্ষমতা!
ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমার হাত লোহার শিকলে বাঁধা!
হাঁটু গেঁড়ে বসে আছি,নতজানু মাথা,
পিঠে,হাতে,বুকে চাবুকের রক্তাক্ত চিহ্ন,
চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে রক্ত,মলিন পোশাক ছিন্নভিন্ন।
ক্ষুধায় ক্লান্ত শরীর,পিপাশায় আড়ষ্ট জিব,
চারিপাশে পুরুষদের অট্টহাসি,নারীদের বিদ্রুপ মেশানো কথা।
আমার পায়ে লোহার বেড়ি,হাত লোহার শিকলে বাঁধা!
ঘুমে-স্বপ্নে-জাগরনে-স্বপ্নে-ঘুমে আবার জাগরনে
সব কিছু কেমন গুলিয়ে যায়,বুঝে উঠতে আর পারিনা
এখন আমি ঘুমে,স্বপ্নে নাকি জাগরনে!