শিক্ষক দিবস
শৈশবের কোনও এক সোনাঝরা দিনে
মায়ের হাত ধরে পা রেখেছিলাম পাঠশালায়।
তখন পাঠশালাতে বসার বেঞ্চ ছিল না,
বগলে বইখাতার সাথে একখানা আসন নিয়ে যেতে হত।
পরম যত্নে উল দিয়ে সেই আসন বুনে দিয়েছিল মা।
স্লেট খড়ি, বই খাতা এসব বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য টিনের বাক্সের ব্যবস্থা হল।
সেই টিনের বাক্সটা আজও রয়েছে বাড়িতে,
সেটা দেখলেই মনে পড়ে তার উপর কতই না অত্যাচার করেছি ছেলেবেলায়।
ছোটবেলার সেই পাঠশালাটাও পথের ধারে ঠাঁই দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকে।
ঠিক যেমন আজ থেকে তিরিশ বছর আগেও ডাকতো।
সেই পাঠশালায় স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন শিক্ষকমহাশয়রা।
পরম যত্নে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ সব শিখিয়েছিলেন যারা,
তারা আর কেউ নয়, আমার আচার্যদেব আর আচার্যাগণ।
স্লেট পেনসিল, বই খাতা আর বইয়ের বাইরের জগতের সাথেও পরিচয় করিয়েছিলেন তাঁরা।
তাঁদের কথার যাদুতে ক্লাসরুমে ঢুকে পড়তেন রবি ঠাকুর, নজরুল, বিদ্যাসাগর আর সুকুমার রায়রা।
অমল আর দইওয়ালা ক্লাসরুমে হাজির হতো,
হঠাৎ করে সিপাহী বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠতো ক্লাসরুমে।
মানসচোখে ভেসে উঠতো টেথিস সাগর ভেদ করে হিমালয়ের মাথা তোলার দৃশ্য।
ক্লাসঘরেই চাঁদের মাটিতে পা রাখলেন নীল আর্মস্ট্রং।
রামায়ণ মভাভারতের চরিত্ররা মাঝে মাঝেই হাজির হতেন ক্লাসরুমে।
আচার্যদেবরা আজও পাঠদান করেন,
সকলের অলক্ষ্যে নীরবে নিভৃতে তীরে শাণ দেয় অর্জুনরা।
জীবনবোধ আর মূল্যবোধেরও হাতেখড়ি হয় পাঠশালায়।
যে আচার্যরা সন্তানসম ছাত্রদের পরম যত্নে মানুষ করেন,
আজ তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধার্পণের দিন।
আজ সেই আচার্যদের প্রণাম জানাই।