শিলাবতীর পাড়ে বসে কত কিছুই মনে পড়ে।
দিন কেটে যায় ডাচ সাহেবের বানানো এই কুঠি ঘরে।
এক পাশে এই কুঠি বাড়ি, অপর পাড়ে কুঠি বাজার।
নদীর জলে হিসাব আছে, নীলের দাদন হাজার হাজার।
কাঁসা পিতল, রেশম সুতোর বিপণন যুগের খাতায়।
সেসব কিছু লেখা আছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়।
সেসব এখন বড্ড অতীত কেউ রাখেনা তার খবর।
চেতুয়া ডিহির বটের তলায় চাঁদ খাঁ পীরের সেই কবর।
একলা কাঁদে চেঁচুয়াতে চৌদ্দ জনের শহীদবেদী
দাঁড়িয়ে আজও নিমতলাতে নীলের চিমনি অভ্রভেদী।
ডাচ সাহেবের নৌকা এলো পৌনে দুশো বছর আগে।
শিলাই পাড়ের এই জায়গাটি সাহেবের খুব ভাল লাগে।
তার পরে এই কুঠি হল, তৈরি হল ভাসাপুল।
গ্রীষ্মে শুকায় শিলাবতী, বর্ষায় তাঁর ভরা দু'কূল।
দাঁড়িয়ে আছে চেতুয়ার বাঁধ, লড়াই করে বানের সাথে।
জোয়ার ভাটা আজও আসে নিয়ম করে দিনে রাতে।
ভাটির টানে বাঁশ ভেসে যায় দূরের ওই কাগজ কলে।
একদিন তো চলতো জাহাজ শিলাই নদীর এই জলে।
হোরমিলার স্টীমারটা নেই একলা ভীষণ ঘাটগুলি।
কেমন করে সোনালী সেই দিনগুলোর কথা ভুলি?
শোভা সিংহের গড় আর নেই, বিশালাক্ষী সাক্ষী আছে।
সব কিছুই লেখা আছে শিলাবতীর জলের কাছে।
ক্ষীরপাইয়ে বর্গীদমন, বাবরসা-র স্মৃতি জুড়ে।
ভোলা দারোগা খুন হল, চেঁচুয়াতে দিন দুপুরে।
শ্যামগঞ্জের নুনের লড়াই, ক্ষেপুতের এম এন রায়।
এসব মোদের খুব গর্বের, আজও তাই করি বড়াই।
স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা নাড়াজোলের রাজার বাড়ি,
জাড়া-গোলক বৃন্দাবন আমরা কি আর ভুলতে পারি?
এক যে ছিলেন বিদ্যাসাগর, ঘাটালের গর্ব তিনি।
বর্ণমালার ঈশ্বর রূপে আমরা সবাই তাঁকে চিনি।
বড় শিমুলিয়ার বট গাছটি দাঁড়িয়ে আছে মাথা তুলে।
অগ্নিশিশু ক্ষুদিরামকে আজও আমরা যাইনি ভুলে।
শহীদ প্রদ্যোত আর প্রভাংশুর ডগলাসকে হত্যা করা,
তিন বছরে তিনটি খুনে, বৃটিশ শাসক জেলা ছাড়া।
সে সবকিছুর সাক্ষী আছে এই প্রকৃতি আর নদীর জল,
সময়ের ধারাপাতে জল বয়ে চলে অবিচল।
রাজা যায় রাজা আসে, নদী লেখে তার ইতিহাস।
জলের ধারায় তাকিয়ে থেকো, দেখতে পাবে সেই প্রতিভাস।
যুগের পরে যুগের পলির চুপিচুপি কথা বলা।
জোয়ার আর ভাটার টানে অবিরাম তার বয়ে চলা।