ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে খুঁজতে তেপান্তরের মাঠ পেড়িয়ে এসে দাঁড়ালাম সন্ধ্যে বেলার কালচে এক দীঘির বাঁকে,
ঘন কালো পায়রার চোখের কাজলের মত শান্ত এক দীঘি,
মোলায়েম পারদীয় আস্তরণ,
কোথাও কোনো কোলাহল নেই,
পাতার ওপর দিয়ে হেটে যাওয়া মানুষের চিহ্ন নেই,
কেবল নির্বাক চেয়ে থাকা,কেবল আমলকীর ঘ্রান,
গাছের কোটর হতে খুটে নিয়ে যাবতীয় শোক আর আঁচল ভর্তি বৈচি ফুল কুড়োতে কুড়োতে ভালোবাসার মানুষটা এসে দাড়ালো সিঁড়ির ওপর,যার নাম ধানসিঁড়ি,
ধর্মহীন,সস্ত্রহীন মানুষদের কথা বলতে বলতে গেয়ে শোনালো সে আমায় অন্নদামঙ্গল,
তার চোখে দীঘির জল,
কানায় কানায় টলমল..
আমার আবডালে,নত মুখে দাঁড়িয়ে
কেবল একটিবার ছুঁতে চাইলো সে আমার হাত..

ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে গিয়ে
এক লক্ষ চিঠি পাঠালাম একলক্ষ ঠিকানায়,
কতক চিঠি শুশুনিয়া গেল,কতক গেল বেলঘড়িয়ায়
কতক চিঠি ভাষায় কুলোলো না,কতক অক্ষরে অসম্পূর্ণ সাদা খাতায়..
অপেক্ষায় কতক বছর কেটে গেল,
ডাকবাক্সে বার বার কান পেতেও শুনলাম না শব্দ..

বন্যার বছর আসল চিঠি,
ভালোবাসার মানুষ এখন আর সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালে না,উলুও না,রান্না দূর,সেলাই টেলাই গেছে চুলায়
কি এক অসুখে নাকি ভুলেছে সে সব...!!

ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে খুঁজতে ফিরে এলাম ছেলে বেলায়,
দেখি উঠোন লেপছে মা ভোর বেলায়,
পথের ধারের শিউলি গাছে বসেছে কোকিল..
কলতলায় দাঁড়িয়ে দাঁত মাজে ছোট বোন।
দেখি কমলেশ আর আমি স্কুল ফেরত আম কুরোতে গেছি দিঘীর ওপার এবং হারিয়ে ফেলেছি পথ,
দেখি আমার বাম দিকের রাস্তায় শুয়ে আছে ভালোবাসার মানুষ,
কোলবালিশের বেড়া দেওয়া লাল মোরাম..

ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে খুঁজতে শুয়ে পড়লাম রাস্তায়,এখানে কোনো দীঘি নেই,নেই পাহাড়,নেই কোকিল,নেই কমলেশ,নেই মা..
দেখি বৃষ্টি নেমেছে বুকের ভেতর,এবং আমি ভেসে যাচ্ছি,দীর্ঘদিনের জমে থাকা পাথর গলে জল হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি ফোঁটায়,টলমল ডুবু ডুবু প্রায় পঁচিশ হাজার চিঠির নৌকা..

ভালোবাসার মানুষের কোমরে পা রেখে,আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম 'তারার মত একটা টিপ পরে ফ্যাল ফ্যাল করে চাস কেন?'
লজ্জায়,স্নেহে যতনে বুকে মুখ লুকিয়ে সে আমায় জানালো পথে পথে ছড়ানো ভালোবাসার সাক্ষী  ধানীজ্যোৎস্নার মতো অক্ষয় সিঁদুর কৌটো,তার সিঁথি জুড়ে এঁকে দেওয়া সিঁদুরের অধিকার,
আলতার আবদার...

প্রত্যেক চুম্বনে কত কত বার ঝর্ণা হয়েছিল সে,
কত উপোষী একাদশীর রাতে বান ডেকেছিল আঙিনায়..