প্রবল তৃষ্ণার তাপে জ্বলে হৃদয়ধারা,
সুদূরের আঁধারে মিশে যায় সন্ধ্যাতারা।
চির অভিসারে আমি তব সন্ধানী—
পুলক মোর দগ্ধ, আঁখি ক্লান্ত-বিহ্বল টানি।

কেমন সে মোহ, কী শিহরণে কাঁপে মন,
নাহি জানি এ প্রেম, নাহি জানি বন্ধন।
দূরালাপনে যে সুধা মরে যায় ম্লান,
তোমা বিনা এই জীব, শূন্য অবশান।

তোমারে দেখিতে চাহি, সুধা মোর পিপাসা—
তোমা বিনে এ জীবন যেন মরুভাষা।
চন্দ্র-প্রহরে তব রূপের প্রত্যাশা—
হৃদয়ের গভীরে প্রেয়সীর অনির্বাণ ভাষা।

আছে মোরে প্রান্তরে, বহি তব প্রতীক্ষা,
প্রিয়া, অবিচ্ছেদে মোর অনন্ত নিরীক্ষা।
চির অন্ধকারে আমি দ্বীপের অন্বেষণে,
মম স্নেহময়ী, দীপ্ত মিশে আছে প্রেমারণে।

প্রবল অনুরাগে মোর জাগে চির তৃষা,
তুমি যে হৃদয়ে বহি অনন্ত পিপাসা।
নিঃশব্দ ব্যাকুলতায় আঁধারে ডাকি—
চাঁদ ফোটে, কিন্তু চোখে স্বপ্ন নেই বাকী।

তোমারে দেখিবার ইচ্ছা ক্রমে বাড়ে,
দূরত্বের কালো গ্রাসে হৃদয় পোড়ে।
আনন্দ মোর অশ্রুতে বয়ে যায় আজ,
পূর্ণিমা রাত্রিতে ঢেকে গেছে লাজ।

প্রেম কি এ প্রণয়, না কি কেবল মোহ?
বিরহের আঁধারে মোর প্রাণ কাঁপে যে দোহ।
দেহেরও অতীত এক টান কি মোরে রয়,
রসায়নে বাঁধা দু’জন চিরসুখময়।

কত বসন্তে কাটিল আমাদের প্রণয়,
প্রেমের শিখাটি আজো তবু নাহি ক্ষয়।
চাহি তোমার নয়নে সেই প্রথম দৃষ্টি,
বাহিরে পরিবর্তন, ভেতরে যে অদৃশ্য সৃষ্টি।

আছি আজো তব শুভ্র স্মৃতির মালায়—
তুমি মোরে ছাড়িবে কি বহু দিনের খায়া?
জানি মোরে তুমিও করো অবিচ্ছেদ বাস,
তবে কেন চোখে কেন দূরত্বের আভাস?