দুঃখ আসে, দুঃখ যায়, আমরণ বহিয়া থাকে,
নদীর মতো বয়ে চলে, বাঁধন ভাঙে না তার বাঁকে।
কারো মুখে হাসির ছায়া, কারো চোখের জলে,
জীবনপথের অজানা গানে মিশে দুঃখের তলে।
কেউ বলে ব্যথার নাম, কে বা জানে তার সুর,
বয়ে চলে সেই অশ্রুর প্রণয়কথা দুর বহুদূর।
এক হৃদয়ে এসে লাগে, আবার অন্যটায় হারায়,
দুঃখের সেই চিরাচরিত খেলায় হৃদয় ভেসে যায়।
মনে হয়, ক্ষণিকের তরে হাসি খুঁজে পায় স্থান,
তবু ভিতরে লুকানো থাকে দুঃখের অমোঘ গান।
বৃথা চেষ্টা করে মানুষ, মুক্তির খোঁজে ভাবে দুঃখহীন,
তবু কোথায় যেন বাঁধা, যেন তারে চেনে না জমিন।
আজ এ বুকে, কাল ও বুকে, দুঃখের সেই ধারা,
স্বপ্নের মাঝে মিশে থাকে, জীবন যে তারে সারা।
এ এক চিরন্তন রীতিমালা, মানুষের সেই পথ,
সুখ দুঃখ মিলেমিশে হয় জীবনস্রোতের মত।
যেথা হাসির ছায়া পড়ে, সেথায় কান্না জাগে,
দুঃখের এই চিরকালীন লীলায় সবাই মিশে থাকে।
তবু জীবনের এই সুরে খুঁজে পায় সুখের স্নেহ,
যেন দুঃখের সাগরে ভাসে, শান্তির চির প্রবাহ।
কবিতার ভাবার্থ:
এই কবিতায় দুঃখের চিরস্থায়ী রূপ এবং তার স্থানান্তরের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কবি দুঃখকে ব্যক্তিগত অনুভূতির বাইরে নিয়ে গিয়ে মানবজাতির এক সাধারণ বাস্তবতা হিসেবে তুলে ধরেছেন। দুঃখ বা বেদনা, নাম ভিন্ন হলেও, মূলত একই অনুভূতির প্রকাশ। একজনের দুঃখ শেষ হয় না; বরং তা কেবল অন্য কারো উপর স্থানান্তরিত হয়। এইভাবে, দুঃখ কখনও পুরোপুরি বিলীন হয় না, বরং এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির জীবনে স্থানান্তরিত হয়। এটি দুঃখের অবিচ্ছিন্ন চক্রের প্রতিচ্ছবি, যা প্রতিটি মানুষের জীবনে চিরকাল বিদ্যমান। তাই এই দুঃখকে জীবনের অংশ ভেবে এগুতে হবে, খোঁজে নিতে হবে মুক্তির পথ।
তাইতো কবি তাই বলিয়া উঠেন!
"কেউ বলে কষ্ট, কেউ বা বলে বেদনা;
দুঃখ দুটোর একত্রিত রূপ!
মানুষের দূঃখ কখনও শেষ হয়না;
শুধু স্থানান্তরিত হয় বহুজনে!"