বাজান অও বাজান, আমার কথা কি বাজান ভুইল্লা গেলা?
সেই নয়ডা বছর ধইরা তালগাছ ডার নিছে রোজ বিয়ালে যাই।
এই আশা লইয়া, যদি বাজানেরে একডি বার দেহিতে পাই।

বাজান-রে আমি পেডের খিদায় খালি কান্দি আর কান্দি বাজান।
কেউ আমারে খাইতে দেয় না, আমার লাল চুড়ি লাগবোনা।
আমারে লইয়া জাও বাজান, মায়ে ও খাওন দেয় না বাজান।

ছাছায় আমারে কালি মারে গো বাজান, আমার বিছার কেডায় করবো।
আমি কালি, অও বাজান-অও বাজান কইরা কান্দি আর কান্দি।
অও বাজান, সেই কবে আমারে একলা ফালাইয়া কই গেলা।

মনে আছে বাজান? তুমি আমারে কুলে লইয়া ধানের শীষ দেহাইতে লইয়া যাইতা।
আমি তুমার ওই মুখ দেইহা ধানের শীষ দেহিতাম বাজান। তুমি কেমনে ভুইল্লা গেলা।

পাড়ার বুইড়া একডা বেডি কইলো, তোর বাজান নদীতে ডুইবা গেছে।
আমি বিশ্বাস করি নি বাজান, তুমি ফিরা আও বাজান, ফিরা আও।
বাজান রে একটিবার তুমি কইয়া জাও বুইড়া বেডির কথা মিছা।

আমি ইস্কুলে যাইবার ছাই, কিন্তু কেউ আমারে ইস্কুলে লইয়া যায় না।
আমার ইস্কুল ব্যাগ এখনও আছে, প্রতিদিন সহালে বারান্দায় বইয়া থাহি।
কহন তুমি আইবা আমারে লইয়া ইস্কুলে যাইবা, বাজান তুমি ফিরা আও।

কতদিন কতবার ইস্কুলের মেডাম আহে ইস্কুলে নিবার লাইগা,
ছাছায় ছুক বড় কইরা আমারে কয়! তোর কোনো ইস্কুল নাই!
তোর বাপে আইলে ইস্কুলে লইয়া যাইবো।

মায়ের কথা আর কি কমু বাজান, ছাছার ঘরের এই কাম ওই কাম!
খালি কাম আর কাম,
সেই কতদিন হইলো মার ছেহারাও দিনের আলোতে দেহিবার পাই না।

দেখতে দেখতে আইজ আমার ষোলো বছর হইলো।
মায় আইজ ভীষন অসুস্থ, কি জানি হইসে মাথা তুইল্যা দাড়াইতে পারে না।
আমি ছাছার গরু বাছুর ছরাই, ঘরের কাম করি।

জানো বাজান!
আইজ ছাছায় কইলো পড়ার মজিদের লগে নাকি আমারে বিয়া দিবো?
আমি ছমকাই কইলাম, না-না-না ছাছা গো আমার বাজান আইবো।
তুমি আহো বাজান! সবাই কয় তুমি নাকি মইরা গেছো?

ছাছায় জোর কইরা বিয়া দিয়া দিল, বখাটে মজিদের লগে।
আমার মায় অসহায় হইয়া ফ্যাল ফ্যাল কইরা তাকাইয়া আছে।
আর  মা.রে এ এ এ এ এ..... কইয়া বুক ফাডা একডা ছিৎকার দিলো।

ওই মজিদ্যায় রাইতে মাতলামি কইরা আসি আমারে মারে বাজান!
কয় তোর মায়রে কো টেহা দিতে; নাইলে গলা ছিপায়া মাইরা লামু!!
আমি রাইত দিন কান্দি আর কান্দি। তুমি কি আর আইবা না বাজান?

আইজ সহালে ছাছায় কইলো, তোর মায় মইরা গেছে!!
আমিঃ ছিৎকার দিয়া কইলাম, ও বাজান তুমি কি দেহ না?
গিয়া দেহি আমার মায় শুইয়া আছে, আর কথা কয় না!!

মেলা দিন হইলো তালগাছডার নিচে যাই নাই।
শুনছি তালগাসডার উপরে ঠাঠা পড়সে!
তালগাছ ভাইঙ্গা ঝুইলা আছে - সাথে আমিও।
বাজানরে তুই আইলে কোলে কইরা আমায় কবরে নিও!


মর্ম কথা: এখানে কবি রূপক অর্থে মেয়েটিকে সমাজের নির্যাতিত মানুষকে, বাজান দ্বারা সমাজ বা জাতির একজন অভিবাবক বা নেতাকে আর চাচা দ্বারা রক্ত পিপাসু নেতা বা অর্থবিত্তদের বুঝিয়েছেন। সমাজে বাজানের মতো নেতার বা অভিবাবকের খুবই প্রয়োজন। উনার আগমন ব্যতীত এ সমাজ ভাঙ্গা তালগাছের মতো বোঝাতে চেয়েছেন।