শাহানাজ সুলতানা
কয়েক মাস হলো এই বাড়িটাতে এসেছি
অনেক ইচ্ছে ছিল এমন একটি বাড়ি করার
কিন্তু সামান্য ছাপোষা কেরানির হওয়ায়...
ইচ্ছে আছে অনেক কিন্তু সাদ্ধি আমার নেই।
দু’কলম কবিতার লেখার অভ্যেস ও আছে
তাই অনেক বেছে বেছে এই বাড়িটা বাড়া নিয়েছি
মাত্র পঁচিশ’শ টাকায়।
বাড়িটার ব্যালকনি থেকে ডানদিকে তাকালে
একটা ছোট মাঠ,
ঠিক যদি মাঠ বলি তবে ভুল হবে
বলা যায় একটি সবুজে সবুজময় তৃণভূমি।
বাদিকে আছে একটা আঁকা বাঁকা মেঠো পথ
পথের শেষে একটা বুনো ঝোপঝাড়
বেশ কিছু বড় মাপের গাছ মিলিয়ে সবুজ-ঘেরা,
যেন এক নৈশব্দ গড়ে তোলা বিস্তৃতি।
তার পাশ ঘেঁসে বয়ে গেছে একটা রেল লাইন।
তারও কিছুটা দূর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে একটি নদী,
আগের বাড়িটাতে রুগ্ন অসুস্থ হয়ে কাটিয়েছি ক্লিষ্ট জীবন
এবার হয়তো কিছুটা দিন হাপ ছেড়ে বাঁচা যাবে।
এই মাঠটা ওই ঝোপটা ঝোপের পাশ ঘেঁসে বয়ে রেললাইন
রেল লাইনের পাশে ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীটা
জীবনে এক অনুসৃত সজীবতা এনে দেয়-
আমার প্রত্যেকটা সকালের জেগে ওঠা
আর প্রত্যেকটা বিকেল-রোদের ক্লান্তির ভেতর।
ওই ঝোপটার আড়ালে রয়েছে এক টোপ ঘেরা পরিবেশ
সেখানে রোজ বসে মাফিয়া চেলাদের মেলা
যা নিভৃতিতে লোকানো ছিলো এতদিন।
নদীর পাড়ে এলে টেরপেতাম
হওয়া-বিদীর্ণ করা গতির শব্দ।
পূর্ব থেকে পশ্চিমে ভীম গতিতে ছুটে চলে ট্রেন
ট্রেনের কুউ ঝিকঝিক শব্দ সবার কানে আসে
কিন্তু ঝোপের আড়ালটা এড়িয়ে যায় চোখ।
নভেম্বরে শেষে এখানে চলে পাতা পাতাঝরার মৌশুম
গাছের পাতাগুলো বিষন্ন হতে হতে আরো দীর্ণ হয় -
সবুজ থেকে হলুদ, আর হলুদ জীর্নতা নিয়ে
ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে লাল, আর তারপর,
বেলা বেড়েছে মনে করে আরো ধুসর শেষে ঝরে পড়ে।
আমারই চোখের সামনে কঙ্কাল হয়ে নি:সঙ্গ
দাঁড়িয়ে থাকে বৃক্ষগুলো তবু কয়েকটা সবুজ বাঁচিয়ে
রাখে শীতের বিকেল-ধোয়া শেষ রোদের ভিড়ে।
আর আশ্চর্য ভাবে,ওই অস্তি-সর্বস্ব গাছের ফাঁক দিয়ে
এখন ট্রেনের গতি শুনতেও পাই আবার দেখতেও
হৃদয় আমার ছটফট করে তবু নীরব থাকে কলম
গাছেরা কঙ্কাল হয়ে গেলে কিছু আর আড়াল করে না
মানুষের মনটাও ঠিক তাই - একই ধাঁচ।
বিষের কাঁটায় বড় চঞ্চল -অস্থির হয়ে ওঠে কবি মন
তবু আমলার এই দেশে কিছু করার নেই।
স্থির হয় কবি হৃদয়,কলমের আছে প্রতিবাদী সুর
কিন্তু কবি যে বড় অসহায়.........।
তাই তো অস্থির হৃদয় আমার এই দুরদিনে তোমাকেই চায়
তুমি আর একবার তোলো তোমার ওই তর্জনি
যেমনটি তুলেছিলে রেসকোর্স ময়দানে।
২৪ আগস্ট ২০১৬
সময় বেলা ৪টা ২৫, খুলনা