মৃত ভ্রুণ
শাহানাজ সুলতানা
আনকোরা শব্দরা বসত করে অন্তস্তলে
ওরা ভুগছে প্রসব বেদনায়
দিনের প্রথম আলোয়, মলিন সন্ধ্যায়,
ব্যথাতুর পেঁজাপেঁজা মেঘে ভেসে
শরতের কাশফুল নীল আকাশ,
ঝরা শিউলি, শিশির ভেজা ঘাসের বুকে
জন্ম নিতে চায় এক নতুন কবিতায়।
জন্মনেয় চায় পাখির গানে নদীর কলতানে,
মায়ের মমতা আঁচল পিতার জায়নামাজ
ভাইয়ের স্নেহ বোনের ভালোবাসায়।
রাখালের বাঁশি, মাঝির পাল তোলা নায়ে দুলে হাসে পূবাল বাতাসে।
রোদে পোড়া বৃষ্টিতে ভেজা
কৃষকের সবুজ সোনালি ফসলে মিশে
ছড়িয়ে পড়ে বাংলার পথে প্রান্তরে।
প্রেয়সীর কানের দুল, কাচের কাঁকনে বাজে রিনিঝিনি
হয় প্রেমিকের স্বপ্ন চোখের বন্যা।
চায়ের কাপে ডুব দিয়ে যে ছেলেটি খবরের কাগজে
খুঁজতো নিয়গ বিজ্ঞপ্তি
ওরা জন্মনেয় তার স্বপ্ন ভাঙা উদাস চোখে।
ফাগুন ছুঁতে চেয়েছিল যে তন্বী মেয়েটি
নয়নে আঁকতো স্বপ্ন কাজল
মাছের চোখের মত হয়ে আছে আজ তার চোখ।
যে আটপৌরে কৃষাণী মন রাঙাত
পান্তাভাতের হাড়িতে
তার ধর্ষিত দেহের রক্তের হোলিতে
উল্লাসে মাতে মিথ্যার জয়ধ্বনি
ডুকরে কাঁদে সত্যের নীরবতা।
আনকোরা শব্দরা বসত করে অন্তস্তলে
ওরা হঠাৎ গর্জে উঠে বিস্ফোরিত হতে চায়
সিগারেটের হলদে নিকোটিনে
বৃথাই খোঁজে ফেরা অমানুষের ভিড়ে ভালো মানুষের সংজ্ঞা।
মননে লেগেছে দারুণ মঙ্গা,বোধের দুর্ভিক্ষে ভুগছে মনুষ্যত্ব
পৌরুষ্য ভুলে আজ বিকৃত রুচির রথে
পুরুষত্বের অবাধ গমন।
সব দেখেশুনে ক্ষেপে গিয়ে
আনকোরা শব্দরা জমা হয়
দ্রোহের কবিতা হয়ে ডায়রির পাতায়!
জন্মায়না আর ঈসা মুসা যীশু,শাক্যমুনি
জন্মনেয় চেতনার বীর্যে মানবতার মৃত ভ্রুণ।
১১/৯/২০২০