তোমাকে নিয়ে কখনো হয়নি লেখা কোনো কবিতা
ভাবছিলাম এবার কিছু একটা লিখবো।
আমাকে বিদায় জানাতে পাজেরো যোগে আসছিলে-
পাজেরো ছুটে চলেছে রাস্তার দু'ধারের
অবারিত সবুজ শস্যক্ষেত মাড়িয়ে।
থেকে থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে
আকাশমণি, মেগনিস,মেহগনি , জারুল
মনোলোভন পরিবেশ বেশ স্পর্শানুভূতি এলো মনে।
নোটবুক বের করলাম শব্দের বুনন বুনতে
কিন্তু পারলাম না, এসিটা জন্য
ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ করে তুলল
গরম থেকে বাঁচতে গ্লাস খুলে দিলাম,
ভাবলাম প্রকৃতি থেকে
বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া যাবে
সেও করলো বিট্রাই, হুড়মুড় করে
কোথা থেকে উড়িয়ে আনলো ধুলা।
নষ্ট করলো মনোযোগ, ভাবলাম ট্রেনে বসে লিখবো দু'লাইন।
মাটির ডালি,চারমাথা, দুপচাঁচিয়া আদমদীঘি পেরিয়ে
প্রখর রোদ্দুরে পাজের এসে দাঁড়ালো সান্তাহার জংশন
ওভারব্রিজে পা রাখতেই খটখট খটখট আওয়াজ তুলে
বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে এলো সীমান্ত
জংশনে তোমাকে রেখে
হাঁফাতে হাঁফাতে এসে সিটে বসতেই
ভেপু বাজিয়ে সীমান্ত শুরু করলো ছুট।
দম নিয়ে মগজে শব্দ সাজিয়ে মনোনিবেশ করলাম নোট বুকে-
সুনীল আকাশের নিচে বালুচর, ঢেউ খেলানো নদী,
দিগন্ত প্লাবিত হরিৎ মেলা,
অলস দুপুরে পায়ের নূপুর-
চলন বিলের থৈথৈ পানি হাওয়ায় দুলে নৃত্য করছে।
মুক্ত মনে,গোপনে হারালাম শব্দ রাজ্য
ভালোবাসার কবিতা ভালোবাসার ছন্দ
ভালোবাসার রংতুলি ক্যানভাসে।
জানালা ভেদ করে পোড়ামুখী রোদ এসে বাঁধ সাধলো
তাকানো হলো দায় চোখ বন্ধ করে
ঝিম ধরে পড়ে রইলাম।
ঝিকঝিক আওয়াজ তুলে একে একে
নাটোর, মাঝগ্রাম, ইশ্বরদী, ভেড়ামারা, দর্শনা-
দর্শনা এসে একটা ড্রাগন ক্ষেতে চোখ পড়লো
খাচকাটা সবুজ বেষ্টনীর মাঝে
ঝুলছে হাজার হাজার কাচা-পাকা ড্রাগন।
পড়ন্ত বিকেল এক অপরূপ পরিবেশ
ইচ্ছে হলো চুপিচুপি প্রেম সরবরে দিতে ডুব।
সীমান্ত ছুটে চলেছে কোটচাঁদপুর যশোর পেরিয়ে
দিনের আলোকে বিদায় দিয়ে প্রকৃতিকে
স্বাগত জানিয়েছে হৈমন্তীক সন্ধ্যা-
একটু পরে আঁধারে ছেঁয়ে যাবে ধরণী।
নওয়াপাড়া ফুলবাড়িগেট দৌলতপুর পেরিয়ে
অবশেষে খুলনা জংশন।
যখন খুলনা জংশনে, তখন নিয়ন আলো ঝলমলিয়ে উঠেছে
প্লাটফরে দাঁড়িয়ে তাকালাম সীমান্তের দিকে
নদীনালা,ঝোপজঙ্গল হেমন্তের সুদূর বিস্তারি মাঠের ফসল
দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আমি ফিরে এলাম আপন গন্তব্যে
ওখানে পড়ে রইলে তুমি।
১৭/ অক্টোবর ২০২২
সীমান্ত এক্সপ্রেস
বগি নং-ট