ডিজিটাল যুগ তাই বহুকাল খোলা হয় না
মূল ফটকের পাশে লাগানো চিঠির বাক্সটা।
তা কম করে হলেও কয়েক যুগ তো হবেই
                    ধূলোর আস্তরণ জমেছে,
তাতে এখন পোকা মাকড়ে  ঘর-বসতি,
অথচ,একটা সময় প্রতিদিন খোলা হত।
রংবে রঙের খামে
কত রকম চিঠিতে যে থাকতো বাক্স ঠাসা ।
ভাবির কাঁপা কাঁপ হাতের চিঠি বোনের চিঠি,  
                      সে চিঠি জুড়ে থাকতো
মান-অভিমানে আর ভালোবাসার দুষ্টি-মিষ্টি খুনশুটি ,
ভাইয়া দুলাভায়ের নানা অভিযোগ অনুযোগ।
মা'র চিঠি, বাবার চিঠিতে
থাকতো স্নেহ-মমতা জড়ানো আদর, শাসন।
প্রয়োজনিয় অপ্রয়োজনীয় চিঠির কমতি ছিলো না
কিক্তু আমার কাছে কোনোদিন চিঠি আসতো না।
খুব ভাবতাম একদিন আমার নামেও
আসবে চিঠি
কেউ একদিন হঠাৎ করেই লিখবে আমায়-
চিঠির পাতা জুড়ে থাকবে শুধুই আমার কথা।
কেমন আছি আমি,
ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করছি কিনা ?
নাকি অনিয়ম করে শরীরের বারটা বাজিয়েচ্ছি?
বন্ধুদের আড্ডা থেকে সকাল সকাল বাসায় ফিরি কিনা,
এখনো রাত জেগে উপন্যাস পড়ি কিনা,
আগের তাকে ঘিরে মত কবিতা লিখি কিনা?
প্রতিউত্তরে আমি লিখবো
পাঁপড়ি মেলে লালের বন্যায় হারাতে চাও!
ফাগুন সাঁঝের রাগে,নির্জন পূর্ণিমা রাতে, বিরহে ভাসতে চাও রঙ বাহারী কৃষ্ণচূড়ায়?
এসো না কান পেতে শুনি নদীর নিক্কণ
চলো শহরের কোলাহল ছেড়ে হারাই কোনো লোকালয়।
শিশিরের চন্দন জল স্নান করাবে আমাদের দুটি নগ্ন পা
চোখের ভাষায় গল্প হবে যত না বলা কথার।
সঠিক জবাব না দিয়ে  সে লিখবে-
কি করে এতটা রোগা হলে?
নিজের যত্ন একেবারেই নেওয়া ছেড়ে দিয়েছো?
সিগারেটের আগুনে ঠোঁট দুটির কি হাল করেছ
তা-কি আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখেছ কখনো?
ভালো লাগা,মন্দ লাগা সব কথা জানতে চাওয়া,
পছন্দ, অপছন্দগুলোকে সন্মান দিয়ে,
আমার দুঃখ-সুখের সাথী হবে,
আলতো আঁচলে মুছে দেবে শরীরের ঘাম
এমন চিঠির অপেক্ষায় কাটতো দিনমান।
একদিন এসেছিলো শ্যামলীমা মেয়ের সেই কাঙ্ক্ষিত চিঠি,
কাঁপা কাঁপ হাতে ঝর্ণা কলমে সে লিখেছিলো
ফাল্গুনের গায়ে জ্বলে বসন্তের অনল কোকিলের কণ্ঠে বিষাদের সুর,
ফুলের শরীর জুড়ে পোড়া বারুদের গন্ধ,
বাতাসে ঝঙ্কার উঠেছে পৈচাশিক হাসির
অথচ তোমার অনুভূতিতে শীতল অনুভব-
তুমি এ কেমন মানুষ?
      কেমন করে এমন দুর্দিনে,
রাতের ভাঁজে ভাঁজে সাজাও অনুরাগের রাগিণী?
রঙিন করো মধ্য রাতে ডায়েরীর বুক?
তুমুল কারুকাজে মিহি করে স্বপ্ন বোনো?
হে যুবক, কোমরে কার্তুজ কব্জিতে লালসালু বেঁধে
কাঁধে তুলে নাও রাইফেল, মেশিনগান,
স্পৃংয়ের গদি ছেড়ে শয্যা পাতো বন-বাঁদাড়ে,
নদীতে-টিলায় খেত ও খামারের।
এই সবুজ সুন্দর শ্যামলীমা মেয়ে যে
                তোমারই অপেক্ষায় প্রতিক্ষারত।
চিঠির সে প্রেরণায়
কপালে কাফন কব্জিতে লালসালু বেঁধে
মেঘে ঢাকা আকাশের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে
বৃষ্টিভাঙা বিকেল উদাস দুপুর বিষন্ন রাত স্নিগ্ধ সকাল ডিঙিয়ে
বাতাসে কাবাব পোড়া ধোঁয়ায় চোখ জ্বালিয়ে
দীর্ঘ ন'মাসের সংগ্রাম,বধ্যভূমির লাশের স্তুপ মাড়িয়ে
একদিন শ্যামলীমা মেয়ের হাতে তুলেদিলাম
শিশুদের আমুদে কাফেলায়
একখন্ড স্বাধীন ভূমি, একটি স্বতন্ত্র পতাকা
রক্ত খচিত সোনালী ভোর সুনীল আকাশ।
২৪/০৩/২০২২