না, আমি কোনও সাহিত্যিক নই!
সাধারণত যে যে গুণসম্পন্ন হলে
সাহিত্যিক পদবাচ্য হয়,
তার সবই আমাতে অনুপস্থিত।
কালজয়ী কোনও মৌলিক রচনা,
বহুদূর হেটে এসে নতুন করে পড়ার যোগ্য - দূরে থাক,
সাহিত্যের কেয়ারী করা বাগানে
সামান্য আগাছা নিড়োনোর অধিকারও
এতদিনে অর্জন করতে পারিনি!
ডানহাতের রোগা রোগা তিনটে আঙুল,
যারা কলম ধরে আমার হয়ে - আর
স্থুল চিন্তায় ভরা আমার অকাজের মাথা,
চিরকাল আমার উচ্চাভিলাষী ইচ্ছার
লাগাম টেনে ধরেছে, কারণ
আঙুল বা মাথা যে ব্যক্তির - সে তো নিজেই
নিজের ও পারিপার্শ্বিকের চাহিদাপূরণে
আগাগোড়া ব্যর্থ!
জন্ম নিয়েছি যে ভাষায়-
যার সংগে আমার আজন্ম প্রেম, অভিমান,
আলো বা অন্ধকার ;
তাকেই বা কতটুকু চিনি?
আমি শুধু এক অপটু কাঠমিস্ত্রীর মত
শব্দ নিয়ে নাড়াচাড়া করি,
নিতান্ত সাদামাটা, আটপৌরে সব শব্দ
তাদের না আছে বিদ্যুতের ঔজ্জ্বল্য
না - তরবারির ধার!
ওদের নিয়েই আমার কাটুমকুটুম, খেলনাবাড়ি;
শব্দ নিয়ে খেলতে খেলতে,
সর্বাঙ্গে শব্দ মাখি, দু চোখের পাতায়
কল্পনার সাদা ক্যানভাসে ওদের আহ্বান করি,
ওরা দলে দলে এসে ঝাপিয়ে পড়ে
সারিবদ্ধ রেলগাড়ি বা স্বপ্নের সাম্পান
কখনো বা বিমূর্ত এক ছবি,
চেনা চেনা তবু অচেনা,
ভাবনার চিত্রকল্প নারী।
মাঝে মাঝে আবার দিনের পর দিন সাদা খাতা,
আমার ডাকাডাকি, সাধ্যসাধনা বিফলে যায়,
জরা গ্রাস করে চিন্তা!
আবার হঠাৎই একদিন না চাইতেই
অভিমানী প্রেমিকার মত,
পিছন থেকে এসে দু-চোখে হাতচাপা দেয়,
জরা কাটিয়ে রক্তে লাগে মাতন,
অকস্মাৎ বজ্রপাতের তীব্র ঝলকানিতে
আমাকে আপ্লুত করে।
শব্দের সঙ্গে চেতনার ঘর্ষনে
জন্ম নেয় নতুন শব্দ, পড়ে পাওয়া বাক্যবন্ধ।
আমি যত্ন করে তুলে রাখি।
মহৎ সৃষ্টি নাই বা হোলো,
নাই বা থাকলো মহাকাব্যের সম্ভাবনা,
তবু ওরা আমার খুব কাছের,
আত্মার আপনজন।।