নির্জনতার কবি জীবনানন্দ।তাঁর শাব্দিক রূপকল্প আমাদের নিয়ে যায় এক বিষন্ন দৃশ্যময়তায়।অথচ এতেই সীমাবদ্ধ নন তিনি,প্রয়োজনে তিনি প্রতিবাদী এবং তাঁর প্রতিবাদের পন্থা অনন্য।তারই প্রতিচ্ছবি কবিতার এই স্তবক-
"অদ্ভুত আঁধার এক আসিয়াছে পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;"
কোনো পূর্বাপর আয়োজন নেই, নেই কোনো ঘোষণা আছে শুধু নিঃশব্দে অন্ধ বলে চিহ্নিত করে দেওয়া।
"যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া। "
জলের মত শান্ত স্নিগ্ধ শব্দ অথচ কি তীব্র বিদ্রুপের প্রতিঘাত। যাদের
হৃদয়ে প্রেম প্রীতি করুণা নেই তারা যে পৃথিবীর জন্য কি সুপরামর্শ
রেখে যাবে খোদায় মালুম।অথচ অদ্ভুত এক সময় উপস্থিত এখন-
"যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি,
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।"
বর্তমান পরিস্থিতি এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের হৃদয়ভাষ্য তাঁর কবিতায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে।তাঁর সময় থেকে যত আমাদের এই সময়ের দিকে আসতে থাকি ততই যেন সমসাময়িক শব্দটির অর্থ প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে,ইচ্ছেহয় সমসাময়িক কথাটিকে "চিরকালীন" এই শব্দটি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করি।আর ঠিক এইখানে এসে কবি এবং কবিতা উভয়েই মহান এবং অবিনশ্বর হয়ে ওঠেন।