মমতা নামটা আজ রসিকতা মনে হয় তার
কেন যে তার বাবা মা তার নাম মমতা রেখেছিল কে জানে ?
বিয়ের সাত বছর হয়ে গেল, আজও মা হলে পারলো না
ডাক্তারও আশা ছেড়ে দিয়েছে, চান্স নেই বললেই চলে,
চোখের জল বাঁধ মানে না, স্বামীর ভালবাসাও তুচ্ছ মনে হয়,
অনেক ভাবনাচিন্তার পর দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা
যোগাযোগ করে একটি অনাথ আশ্রমে, তারা সেখানে যায়,
সেখানে অনেক শিশু দেখতে পায় তারা, সবাই একটু বড় বড়,
শুধু একটি শিশুকন্যা খুব ছোট্ট, দিন দশেকের হবে বোধহয়,
কেউ নাকি আশ্রমের দরজায় ফেলে দিয়ে গিয়েছিল,
তাকেই পছন্দ হয় মমতার, আপত্তি করেন স্বামী,
"এত ছোট্ট বাচ্ছা মানুষ করতে পারবে না, অন্য কাউকে নাও"
মমতা জেদ ধরে, ঐ কন্যা সন্তানকেই সে ঘরে নিয়ে যাবে
বাড়িতে এসে অবধি তার আনন্দের সীমা থাকে না,
নাওয়া খাওয়া ভুলে সন্তানের যত্নে লেগে যায় সে,
তার জীবনে যে খুশী নিয়ে এল, তাই তার নাম রাখল খুশী......
মা না হওয়ার সব ব্যাথা মন থেকে আজ উধাও যেন
এইভাবে কেটে যায় মাস তিনেক, কিন্তু শিশু সাড়া দেয় না কেন?
কেন ডাকলেও তাকায় না তার দিকে, ভয় হয় মমতার
কদিন এসব লক্ষ্য করে ডাক্তারের কাছে যায় তারা,
ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করে বলে সে জন্মগত মূক ও বধির,
আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মমতার ওপর, স্বামী আশ্রমে ছুঁটে যায়,
তারা বলে, বাচ্ছা ফেরত দিয়ে অন্য বাচ্ছা নিয়ে যেতে,
কিন্তু মমতা কিছুতেই রাজী হয় না বাচ্ছা ছাড়তে, সে বলে,
"পেটের সন্তান এরকম হলে পারতাম কি তাকে ফেলে দিতে"
আগের থেকে আরও বেশী নজর রাখে সে মেয়ের ওপরে
একটু বড় হতে বিশেষ ধরনের বিদ্যালয়ে পাঠানো হয় তাকে
মমতাও গ্রহণ করে একই শিক্ষা, ইঙ্গিতে কথা বলার শিক্ষা,
যাতে মেয়ের সাথে কথা বলতে ও বুঝতে অসুবিধা না হয়
শুরু হয় মা মেয়ের ইশারার এক নতুন জগত,
বাইরে থেকেও এ জগতের সঙ্গে মিশে যায় তার স্বামী
ভুল করে মাঝে মাঝে স্বামীর সাথেও ইশারার কথা বলে ফেলে সে,
খুশীর নৌকায় পা দিয়ে এভাবেই কেটে যায় দশটি বছর
আচমকাই সে জানতে পারে যে সে সন্তানসম্ভবা
খুশীর জল চোখ বেয়ে পড়ে, কিন্তু সে এসব কি ভাবছে ?
স্বামীকে কোনোকিছু না জানিয়েই সে ডাক্তারের কাছে যায়
ডাক্তার কাকা যে তার খুব পরিচিত, তিনি হয়তো বুঝবেন,
ভ্রূন নষ্ট করতে চায় সে, আর যেন মা না হতে পারে কখনো,
ডাক্তার রাজী হয় না ডেকে পাঠায় তার স্বামীকে, স্বামী এসে বলে,
"অন্যের বোবা কালা সন্তানকে ভালবাসা দিয়ে বড় করে তুলছো
আর নিজের পেটের সন্তানকে শেষ করতে চাইছো, কেমন মা তুমি?
কেমন তোমার মাতৃত্বের এই আলো - আঁধারি রূপ ? "
মমতা কেঁদে কেঁদে বলে "পেটে ধরলেই কি শুধু মা হওয়া যায়,
এত দিন ওর মধ্যে দিয়ে যে প্রতিটা মুহুর্ত বেঁচেছি, সেটা কিছু না?
আজ যদি নিজের সন্তানের মোহে ওকে ভুলে যাই, যদি আগের মত
ওকে ভালো না বাসতে পারি, ও সারাটা জীবন কিভাবে কাটাবে ?
তার থেকে সেই পরিস্থিতিকেই নষ্ট করে দেওয়া ভাল, কি বলো ?
স্বামী হেসে বলে, " আজকের দিনটা সারা জীবন মনে রেখো মমতা,
দেখবে এরকম পরিস্থিতি কোনোদিন আসবে না, ঘরে চলো,
খুশী বাড়িতে একা আছে, ও ভয় পেয়ে যাবে...........