তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে প্রিয়তমা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
তুমি আসবে ব’লে, হে প্রিয়তমা,
পিলখানার মেরুদন্ড ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল অসংখ্য নারীর।
তুমি আসবে ব’লে, হে প্রিয়তমা,
রাতের আঁধারে বিদেশী ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে, হে প্রিয়তমা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড হলো। লাশ পড়ে রইল যত্রতত্র।
তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো ফ্যাক্টরির পর ফ্যাক্টরি।
তুমি আসবে ব’লে, রাস্তার মোড়ে দিনদুপুরে আর্তনাদ করে গেল বিশ্বজিৎ।
তুমি আসবে বলে রৌদ্দুরে শুকালো অভিজিৎ,
তুমি আসবে বলে রাতের আঁধারে পরিষ্কার হলো শাপলা চত্বর।
তুমি আসবে ব’লে, হে প্রিয়তমা,
দুর্ভাগা ফেলানি হুমড়ি খেল কাঁটাতারে।
তুমি আসবে বলে দুইটি কবুতর উড়ে গেলে মিড়িয়াপাড়া থেকে,
তুমি আসবে বলে ঘুমিয়ে গেল মুয়াজ্জিন।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে প্রিয়তমা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
প্রিয়তমা, তোমার জন্যে শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে তিস্তা নদী, কেউ একজন এসে দোয়া পাঠ করে যাবে।
প্রিয়তমা, তোমার জন্যে
শেয়ারবাজার খাঁ খাঁ করছে, তোমার জন্য হলমার্ক শুকিয়ে রৌদ্দুর হয়ে আছে।
কেউ একজন এসে শরতের গান শুনাবে, কেউ একজন জল এনে দেবে অন্তিমযাত্রার।
প্রিয়তমা, তোমার জন্য থালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে রুপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র,
তোমার জন্য ডুকুরে কাঁদছে গরিবের বালিশ,
তোমার জন্য ঠাই দাঁড়িয়ে আছে হসপিটালের দেয়ালের পর্দা।
তোমার জন্যে,
তনু, মিতু, খদিজা, একজন সৎ পুলিশ অফিসারের স্ত্রী,
আবরার, মাদ্রাসা পড়ুয়া নুসরাত,
রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র,
মুক্তি মুক্তি বলে অকাতরে প্রাণ দিল রাতে-দিনে-দুপুরে–সবার অগোচরে।
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে প্রিয়তমা।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
আমাদের ঘরে
তোমাকে আসতেই হবে, হে প্রিয়তমা।
(শামসুর রাহমান স্মরণে)