*****
রোদের পরশ তখন অনেক কোমল হয়ে ছুঁয়েছে শরীর;
মাঠের সবুজ ঘাস ছেয়ে গ্যাছে হলদে আভায়-
নারিকেলের পাতার ফাঁক দিয়ে আসা আলো,
আমার চোখের কোণে পড়ে যে আঁধারিয়া খেলেছিলো
দীঘির জলের স্পর্শে মুখতার শূণ্যে লুকায়;
তারপর একটুখানি হাওয়া এসে চোখের পলকে তাকে টেনে নিলো
চৈত্র শেষের হাটে- যেখানে বেলাশেষে মেলেছে জীবনের সুর।
আমি তখন হারিয়ে যাবার প্রবল আকাঙ্খায়-
হাটের পাশ ঘেষে চলেছি ছোট নদীটার দিকে-
পায়ের তলায় হলদে আভার ঘাস;-
একটা পিঁপড়ের সারি জীবনের আশঙ্কায়
পথ ছেড়ে দাঁড়িয়েছে পথের দু'ধারে।
বাদামের ডালে কালবৈশাখীর ডরে বাবুই পাখিটা
যে জীর্ণ বাসা ছেড়ে গ্যাছে-
সূর্যের রক্তিম আভায় তাদের সবার রঙ চঞ্চল হয়!
ছোট নদীটার কূলে দাড়িয়ে থাকা এক প্রাচীন বটগাছ,
চিরপরিচিতের মত রাঙা আলোতে না ভুলে-
নদীর প্রবাহ থেকে টেনে নেয় শীর্ণ নিঃশ্বাস;
কিন্তু ওপারের ভাঙা মন্দিরের ফোঁকরে দু'দিন আগে জন্ম নেওয়া
চড়ুঁই ছানাদুটি- শিকারের খোঁজে গর্তের আড়াল থেকে মুখ বেরিয়েছে যে তরুন সাপটি,-
আর নদীর হালকা স্রোতে মায়ের পিছু পিছু
ভেসে যাওয়া সাতটি রঙীন মাছ-
তাদের সবার মুখে সূর্যের ওই রূপ আলো জ্বেলেছিলো।
বায়ুর প্রবাহ দেখে বোঝা যায় কতটা উচ্ছ্বল সে-
আর কিছুটা পরেই হয়তো সন্ধ্যা নামবে,
তার উত্তপ্ত শরীর এখন ক্রমশঃ শীতল হতে শুরু করেছে;
দিনের আলোয় যে জোনাকির দল সবুজ ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে ছিলো,
তাদের রাত জাগার প্রস্তুতি চলছে-
মা হাঁসটি তার ছানাদের একবেলা সাঁতার শিখিয়ে
গাঁয়ের পথ ধরেছে; কিন্তু আলভোলা যে ছানাটা-
চলার পথে সবসময় হোচঁট খায়,
রক্তিম সূর্যের দিকে এখনো সে চোখ মেলে তাকিয়ে রয়েছে।
ডানা ঝাঁপটিয়ে একপাল পাখি উড়ে গেলো পশ্চিম দিগন্তে-
সূর্যের স্তিমিত আলোয় তাদের শরীর কেবলই ভরেছে রহস্যে!
গাঁয়ের পথ ধরে- চৈতী সংক্রান্তির হাট থেকে
ফিরে চলেছে মানুষ, অনঙ্গ সূর্য তাদের
মুখের জ্যোতি দেখে নিচ্ছে বিদায়;
পশ্চিমের শেষে গিয়ে নদীর শীতল শরীর ছুঁয়েছে সে-
কচুরিপানাও বুঝি ধীরে ধীরে পেয়েছে তার আকর্ষণ।
আর কেউ বোধহয় সূর্যের পানে চেয়ে এতটা রূপ দ্যাখেনি কখনো!
শেওলার শরীর- সমস্ত যৌবন ঘোলাজল,
কালচে আঁধারে ছেয়ে নেয়; একটা জ্বলন্ত মহিমা
নদীর সমস্ত রসে ডুবে গ্যাছে;-
সূর্যকে বিদায় দিয়ে যখন ফিরছি ঘরে আলো-আঁধারিতে,
হলদে পাখিরা উড়ে গ্যাছে ঝাঁকে,-
অবাক বিস্ময়ে দেখেছি, বিশাল বৃক্ষ
তাদের অশাখ শরীর মেলেছে-
অস্তগামী সূর্যের উদ্ভাসে।
*****