করোনা যোদ্ধের সেই বীর যোদ্ধারা
--সুহেল ইবনে ইসহাক

“কেউ যেন আমার মৃত লাশ ছুঁতে না পারে।
সন্তানরা যেন বাবা-বাবা চিৎকারে ঝাপিয়ে পড়তে না পারে আমার বিদেহী শরীরে।
প্রেয়সী যেন আঁচলে চোখ ঢেকে দাঁতে ঠোঁট কামড়ে অশ্রুপাত করতে না পারে আমার লাশের পাশে।”
অভিযোগ অভিমানের বিষে নীল হয়ে থাকে আমার দেহ-মন-প্রাণ।
দুঃখ বিলাশী আহম্মকের মতো আমি আমার অনুভূতির জ্বালা হাড়ে-হাড়ে টের পাই।

অনুভূতিতে হেলির ধূমকেতু, করোনা যোদ্ধে আমার সেই বীর  যোদ্ধা,
তাঁর মতো হাজারো ডাক্তার যোদ্ধা নিজের অনেক সীমাবদ্ধতায়
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন ।
হাসপাতালে কর্তব্যের প্রতিটি দিন মানসিক আর শারীরিক কষ্টে ভরা,
ওরা জানেনা কতদিন টিকে থাকবে?
তবে পালাবে না, পালতে পারেনা করোনা যুদ্ধের প্রথম সারির যোদ্ধারা।


নিজের অসুস্থ বাচ্চা বাসায় রেখে হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসায় ব্যস্ত দেশপ্রেমিক এসব যোদ্ধারা।
নিহত কিংবা আহত যোদ্ধা হিসেবে সারাজীবন স্বীকৃতি-সনদের আশায় নয়,
প্রয়োজনের তাগিদে, দেশ ও দশের তরে আজ স্বীয় জীবনকে
“পি.পি.ই.’র পকেটে নিয়ে করোনা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ।  
বড়কর্তারা অবশ্য টেলিভিশন ইন্টারভিউ, টকশো হাজিরা নিয়ে ব্যস্ত,
অবস্থা অনেকটা ১৯৭১ সালের কলকাতায় আশ্রয় নেয়াদের মতো ।
ওদিকে মেডিকেল ছাত্ররা নেমেছে গেরিলা যোদ্ধাদের ভুমিকায়,
আর মাঝ বয়সি ডাক্তাররা যেন একেকজন কমান্ডার,
কমান্ড কাউন্সিল বিহীন এক অসম যুদ্ধ….।

পেশার নৈতিকতার সাথে হৃদয়কে আলিঙ্গন করে যোদ্ধারা কর্তব্য পালন করছে,
পালায়নি, জানি পালাবেও না।
আজ তাদের ভয় নিজের বাচ্চাদের চুমু দিতে, কোলে নিতে, বুকে জড়িয়ে আদর করতে।
নিজের নিঃশ্বাসকেই বিষাক্ত মনে হচ্ছে সেই বীর যোদ্ধাদের।
দূর থেকে এক হাতে চোখের জল মুছে আরেক হাতে
প্রিয়তমাকে বিদায়ের হাতছানি দিয়ে ছুটে চলছে কর্তব্য পানে।
"আর হাসপাতালে যেয়োনা বাবা, আমরাও যে বাঁচতে চাই,
তোমার কিছু হলে, কাকে বাবা বলে ডাকবো?"
একজন যোদ্ধার সন্তানের গগন বিদারী আর্তচিৎকারে চুপ হয়ে গেলাম,
ইচ্ছে করছিল অনেক আওয়াজ করে ছোট্ট শিশুদের মত কান্না করতে, কিন্ত পারিনি।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভাবলাম,
এরাই আমার দেশের বীর যোদ্ধা ।
সব ভরসা যবে শেষ,
বাঁচলে ডাক্তার,বাঁচবে দেশ।
তাদের জয় হবেই হবে, ইনশাল্লাহ!

রচনাকাল: ২৯ এপ্রিল,২০২০, টরন্টো, কানাডা।