“সাত পাকে বাঁধা”
আলোকসজ্জায় সজ্জিত পুরো বাড়ি; হাজারো লোকের আসা-যাওয়া।
ঢাক-ঢোল আর সানাইয়ের সুরে মুখরিত পরিবেশ।
তারই মাঝে বেজে উঠে মনে বিষাদের সুর!
এতো আনন্দের মাঝেও নিজেকে খুব লাগছে একা; আজ যে আমার বিয়ে।
বিয়ের লগ্নে প্রতিটি মেয়ের আঁখি থাকে অশ্রুসিক্ত হাসির মাঝেও!
প্রভাত বেলার প্রথম লগ্নে হয়েছে আমার দধি-মঙ্গল যখন ফুটেনি ভোরের আলো।
হাতে আমার দিয়েছে পড়িয়ে শাঁখা আর পলা!
কাছের মানুষগুলো দিচ্ছে প্রাণভরে আশীর্বাদ সুখী জীবনের;
তাদের আঁখি আজ অশ্রুসিক্ত।
সূর্যের স্নিগ্ধ কিরণে আলোকিত হয়ে গেল পুরো আকাশ; নেই কোন মেঘ আকাশের বুকে।
শুধু আমার হৃদয় জুড়ে শূন্যতা আর কান্নার চাপা কালো মেঘ!
মা-মাসি-কাকি মিলে নিয়ে এলো পুকুর থেকে জল;
রাঙ্গাতে আমায় হবু স্বামীর গাঁয়ের হলুদে।
এতো ভিড়ের মাঝে আজ বার বার মা-বাবাকে ইচ্ছে করছে দেখতে!
আজকের পরেই তো তাদের ছেড়ে যেতে হবে অন্য এক পরিবেশে;
যেখানে সবাই অপরিচিত।
বাবা আমার মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে;
আঁখি তার অশ্রুসিক্ত মেয়েকে সম্প্রদান করতে হবে বলে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর এলো; সবাই ব্যস্ত সাজাতে আমায় বিয়ের কনের সাজে!
গোধূলি লগ্ন গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো; ভেসে এলো কানে শঙ্খ আর আযানের আওয়াজ।
এলো হবু স্বামী বর বেশে; মা করলো বরণ মেয়ের হবু জামাইকে।
এতো আলোকসজ্জা; ফটোগ্রাফারের মাঝে সবকিছু লাগছে বিরক্ত!
নিয়ে গেলো আমায় বৌদিরা মিলে ছাদনাতলায়।
পানপাতা সরিয়ে হলো আমাদের শুভদৃষ্টি আর মালাবদল।
বাবা তার মেয়েকে সম্প্রদান করে গেল চলে অন্য কক্ষে;
কেননা পারবে না দেখতে মেয়ের বিয়ে!
অগ্নিকে সাক্ষী রেখে গাঁটছড়া বেঁধে হাতে হাত ধরে সাতবার করলাম প্রদক্ষিণ।
আমার সিঁথি রাঙ্গিয়ে দিলো এক চিলতে লাল সিঁদুরে; আমার জীবনসঙ্গী!
সাত পাকে বাঁধা পড়লো দুটি হৃদয়!
এই বন্ধন যে সাত জন্মের বন্ধন।
[যখন এই মুহূর্তটি অনুভব করি খুব কান্না আসে! কি করে বাবা কে ছেড়ে অন্য ঘরে যাবো বিয়ে হয়ে]