দুঃখ দ্যাখেছো কখনো?

সুধীর দাস রূপম

দুঃখ দ্যাখেছো কখনো?
এই যে আমাকে দ্যাখো
নুব্জ দেহ, ক্লান্ত শরীর, বিষন্ন যন্ত্রণাগ্রস্থ হৃদয়
কোটরগত চোখ, উচ্ছন্নে এলোমেলো চুল
কপালে শব যাত্রার বলিরেখা।

পিয়াকে হারানোর দুঃসহ শোক
ঘুমহীন প্রতিদিন নগ্ন অন্ধকার গহবর রাত
স্যাতস্যেতে কর্দমাক্ত বিছানা,ভ্যাপসা গন্ধে এলানো শরীর,
পোকামাকড়ের সহবাসে বসতি জীবন
অন্নহীন ক্ষুধার্ত পেট, হতাশা, প্রতিদিন বুভুক্ষ মুমূর্ষু পরমায়ু।

দুঃখ দ্যাখেছো কখনো?
ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন? নিজেকে নিজে বিমুর্ত বলিদান? ভেঙ্গে যাওয়া প্রেমের তাজমহল?

আমাকে দ্যাখো, এই যে আমি এখনো বেঁচে আছি!

যেভাবে বেঁচে থাকে একটি রাস্তার ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা লোমশ ওঠা ক্ষুধার্ত হাড্ডিসার কুকুর!
স্বপ্নহীন ঘরহীন উদ্বাস্তু যাযাবর
একজন ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যবচ্ছেদ সংসার!

ল্যাম্পোষ্টের পাশে ডানা ভাঙ্গা একটি দাঁড় কাক
যেভাবে কা কা করে চিৎকার করে
এক ফোঁটা জলের তৃষ্ণায়
এতোটুকু বিষণ্ণ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ভালবাসার কাঙ্গাল হয়ে আজন্মকাল।
থ্যাতলানো কঙ্কাল, জীবন্ত পতিত লাশ।

একজন পিতাকে বৃদ্ধাশ্রমে না দিয়েও তার বিলাসী সন্তান যেভাবে রেখে যায় রেল স্টেশনের পাশে
ছেলেটা কথা দিয়েছিল তাকে ঘরে ফিরে নেবে!
অপেক্ষায় দিন গোনে পিতা, সন্তান আর ফিরে আসে না।

একজন ভাই বিশ্বাস হন্তার পরিচয় দিয়ে বড় ভাইকে ঠকানোর ইতিহাস গড়ে মীরজাফরের।

দুঃখ দ্যাখেছো কখনো?
ভালোবাসার মৃত্যু দেখেছো কখনো?
ব্যর্থ প্রেমিক দেখেছো কখনো?

এই যে আমাকে দেখো?

আমার অনাদি আকাশে নিরন্নের হাহাকার
আমার অনাবিল আকাশে কৃষ্ণগহবর
আমার ছায়াপথের নক্ষত্রপুঞ্জ নেই
আমার নদীতে স্রোত নেই
আমার হৃদয়ে ভালোবাসাহীন বঞ্চনার ইতিহাস, কলঙ্ক, প্রতারিত স্বপ্নহীন প্রাণ আমার।

আমার রাতের আকাশে কোন চাঁদের জোছনা নেই
মুমূর্ষ আমার আত্মা, আমার হৃদয়,আমার অযবয়ব
চির বঞ্চিত লাঞ্ছিত ব্যর্থ প্রেমিক আমি
আমার শহরের নিয়ন আলো নেই
আমি আজ পরিত্যক্ত এক নগরী!

দুঃখ দ্যাখেছো কখনো?
এই যে আমাকে দ্যাখো!
তারপর লেখো মিশরের মমির ইতিহাস
আমাকে দ্যখো, তারপর মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে আবিষ্কার করো ভীমবেটকা, হরপ্পা,মহেঞ্জোদাড়ো।

কলকাতা
রাত-০১.৪০
২১,১১,২১