কাঁটাতারে ঝুলন্ত ঝলমলে যে যুবক
সুধীর দাস
কাঁটাতারে ঝুলন্ত ঝলমলে যে যুবক
সে যুবক আমি
দুটি ডানা শকুনের মত ছিঁড়ে নিয়ে গেছে
যে বিচ্ছেদের স্টেনগান
অন্ধকার চোখের গর্তে ফুলে ফেঁপে উঠছে
আগামী দিনের আলোর ইস্তেহার।
আমার বুক অটল পাথরে হিমশীতল হিমালয়
আমার পাঁজর আমাজনের আঁকি-বুকি বন
আমার চেতনায় অগ্নি স্ফুলিঙ্গ আগ্নেয়গিরি
আমার মেধায় সবুজ শ্যামল দেশপ্রেম
মা মাটি স্বদেশ,মাতৃভূমি পিতৃভূমি।
রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন ছেঁড়া মাংস উদ্ধত হাতের মুঠোয়।
কাঁটাতারের বুকে যে ঝলমলে প্রজাপতি উড়ে
সে আমি
উড্ডীন নীল আকাশে আমার রঙধনু আবেগ
তেজদীপ্ত সূর্যের মতো অগ্নিশিখা
জ্বলে আমার চোখে।
মিছিলের ভেতর গুলি খাওয়া একঝাক কবুতর
বুলেটের আঘাতে রক্তাক্ত
তার মধ্যে আমিও আছি
বুকের ভেতর বিবেকের সুনামি সাইরেন।
কাঁটাতারে বিদ্ধ যে গুলি খাওয়া যুবক
সে আমি
আমার মুখে অগ্নিবর্ষণ,
কুশাসন,স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক
গণতন্ত্র মুক্তি পাক!
কলকাতা, ২৮ ডিসেম্বর -২২
দুঃখ দেখেছ কখনো?
#সুধীর_দাস
তুমি, দুঃখ দেখেছো কখনো?
আমাকে দেখো!
এই যে ভগ্নহৃদয়
ভাঙ্গা বুক
রক্তাক্ত পাঁজর
হাড্ডিসার দেহ, ক্লান্ত স্থবির।
দেখো, উদ্বাস্তু জীবন
যাযাবর সত্তা
রোগে
শোকে
যন্ত্রণায় ছটফট কাতর
ব্যর্থতায়
আঘাতে
প্রতারণায়
অটল মমি পাথর!
আমাকে দেখো,ক্ষুধার্ত অবয়ব
চোখে জল
বুকে না পাওয়ার ব্যর্থতা,হাহাকার
লাল হৃদপিণ্ড
চাপ চাপ থোকা থোকা রক্তের দলা
মাংসপেশি হীন খোঁড়া খোঁড়া হাড়
কৃষ্ণ কালো গহবর উদর
অভূক্ত!
আমাকে দেখো
আমার আকাশের চাঁদের স্ট্যাচু ভেঙ্গে গেছে
উল্কা নক্ষত্র ছায়াপথ টুকরো টুকরো
জ্যোতিষ্ক নেপচুন প্লুটো ইউরেনাস
দূরে বহুদূরে।
সুখের শুকতারা ধূসর ম্লান।
দুঃখ দেখেছো কখনো!
দেখো!
মিশরের মমি নয়
কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নয়
সাক্ষাৎ চোখে দেখা নষ্ট দুঃখ!
মাতৃহারা
বাবাকে হারা
প্রিয়তমাকে হারানো দুঃখ।
আমাকে দেখো
ক্ষুধার্ত
মুমূর্ষ
ডাস্টবিন
ভাগাড়
অপাংক্তেয়
অবাঞ্চিত আমি।
কলকাতা
১১,০৬,২১