আমি একটি নগণ্য মেয়ে

আমি একটি  নগণ্য মেয়ে–
অতি দীন দরিদ্র খেটে খাওয়া বস্তিবাসী।
জন্মের পর মুহূর্তে জীবনের আসল লড়াইয়ে সাথী।
অহর্নিশ খুঁজে বেড়াই অস্তিত্বের খড়কুটো।
নভো-নীলের মাঝে সবুজ দেখার আকুলতা!
প্রতিটি পদক্ষেপে অনুভবী বেঁচে থাকার ন্যূনতম লড়াই।
নিজের হত দরিদ্র পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার শত প্রচেষ্টা!


আমি একটি নগণ্য মেয়ে–
চাই নি সমাজের কাছে বিশেষ মান সম্ভ্রম,
ভাবিনি কোনোদিন উচ্চ ঘরনির স্থাপনচিত্র দেখতে।
ভাবাবেগের বিলাসী স্বপ্নকে পিছনে রেখেছিলাম বরাবর।
শৈশবের মানবিক বিকাশকে ছাইচাপা দিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম;
রোজনামচায় কোনো অলীক কল্পনাকে স্থান দিই নি।
নিভৃতে নিজেকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম;
একান্তের আস্তানায়, একটা শান্ত জগতের স্বপ্ন দেখেছিলাম।


আমি একটি নগণ্য মেয়ে–
মনের আয়নায় এঁকেছিলাম নিজের সাধারণ  রাজকুমারকে।
হোক না সে,হত দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ।
আমার কাছে সে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে আসা রাজকুমার;
আমার জীর্ণ ক্যানভাসে সে তো রঙিন প্রতিচ্ছবি।
আমার আঁধারের মাঝে সে তো উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা!
মনের দর্পণে রামধনুর সাতরঙা আবেগ,
যার অনুভব উদ্বেলিত ক'রে প্রতিক্ষণ।
মরুভূমির রুক্ষ প্রান্তরে মরুদ্যান,
এক সমধুর স্নিগ্ধ শরতের সুবাস।


কিন্তু, আমি যে একটি নগণ্য মেয়ে–
যার সামান্য স্বপ্নটুকুও দেখতে নেই,
ভাবতে নেই অলীক কল্পনাপ্রসূত মানুষ।
আমাদের জন্ম আস্তাকুঁড়ে,বেড়ে ওঠা সমাজের উচ্ছিষ্ট পেয়ে ও খেয়ে।
আর ভালবাসা,সে তো আমাদের দেখতে নেই।
ভালো বাসা অন্যের হাতছানিতে যদিও বা জোটে নিভৃতে ,ভালোবাসা দুরাশা!


আমি একটি নগণ্য মেয়ে–
একটাই পরিচয় গরীব অন্নহীন রক্ত মাংসের মেয়ে।
সমাজের অতি মান সম্ভ্রম মানুষের কাছে সময় বিশেষে দামী।
অনেক প্রলোভনের স্বপ্নমালায় আবদ্ধ একটি দীন দরিদ্র মেয়ে।
জানি প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দেবে পতিতালয়ে–
হাজার স্বপ্নের ক্যানভাস সংক্ষিপ্ত হয়ে ল্যাম্পপোস্টের ধারে।
ঘোলাটে আলোয়,লাল ঠোঁটে শেষ সংলাপ।
আমার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানে থাকবে না কেউ।
আমি নীরবে ব্যথার যাপন চিত্র এঁকে যাবো শেষাংশে।


আমি একটি নগণ্য মেয়ে–
শতছিন্ন কাপড়চোপড় পরে জীবনকথা লেখা,
হ্যারিকেনের অস্পষ্ট আলোয় পৃথিবীকে দেখা।
উদাসী বাউলের মতো পরিযায়ী পাখি হ'য়ে বেঁচে থাকা।
ন্যূনতম লড়াই করে বাঁচতে চেয়েছিলাম এই সমাজে।
পারি নি নিজেকে বিপদমুক্ত রাখতে;
তোমাদের প্রলোভনে সঁপে দিয়েছিলাম নিজেকে।


আমি সেই তোমাদের অতি সাধারণ নগণ্য মেয়ে–
পারিনি বাঁচাতে নিজের মান সম্ভ্রম।
অবশেষে  হারিয়ে ফেলেছি জনসমুদ্রের অশান্ত গোলকধাঁধায়–

নগন্য মেয়েদের কোনো দিন দিবাস্বপ্ন দেখতে নেই,
ভালবাসতে নেই সমাজের সামাজিক মানুষদের!