শহর গিলেছে গাঁ
হুই যে হোতা বাঁশের ঝাড়ে,
থোকা থোকা জোনাক জ্বলে,
তারই ধারে পুকুর পাড়ে ছেল মোদের ঘর।
সনঝা কালে না ঘুমলে,
ঠাম্মী বলতো, পান নে গালে
তেনারা সব আসবে ধেয়ে, ক্যাঁতায় ঢুকে পড়।
পাঠশালাতে যাবার কালে,
পথের ধুলো মাথায় গালে
রতন কামাল সবাই মিলে, করতাম হই চই।
গুরুমশাই ছড়ি নেড়ে,
কেলাসঘরে এলে পরে,
চোখ পাকিয়ে ব্যুলে দিতেন, কোতায় তোদের বই।
বাদলা দিনে চালের পরে,
ঝম-ঝমা-ঝম বৃষ্টি ঝরে
ব্যাঙগুলা ঐ নালার ধারে এক সুরে গায় গান।
করিমচাচা অশত্থতলে,
টুনটুনাটা নাচিয়ে কোলে
সকাল সনঝে আপনমনে, গাইত শ্যামের গান।
রফিক মিঞা ধানের খ্যাতে,
লাঙ্গল চষে দিনের পাতে
মুড়িমুড়কি ধামায় ভরে করতেন জলপান।
রথের মাঠে ঈদ নামাজে,
কিংবা দোলে, পুজোর সাজে
একই সাথে খেলাধুলা, একই সাথে লাচ গান।
করবো বুইল্যে লিখাপড়া
শওরে এল্যাম গাঁটি ছেইড়্যা
ছাড়তে হল্য গাঁয়ের ভিটে, নদীর জলে স্নান।
হেথায় শুধু ইট জঙ্গল,
পথে ছুটে গাড়ির ঢল,
ছুটছে মানুষ ভর দিন রাত, একটুস নেই প্রাণ।
পাঁচটি বছর কাটিয়ে শেষে
এলুম ফিরে নিজের দ্যাশে।
দেখি, গাঁ-টো হারাইন গ্যেছে, কোথায় সাধের গ্রাম!
নেই সে পুকুর, বাঁশের বন,
অশথতলা, নদীর ঝাঁপান
রফিক, কামাল, করিম চাচার যায় না শুনা নাম।
পায় লাগে না পথের ধুলা,
ধানের খ্যাত হারাইন গেলা,
পাঠশালাটোর জমির পরে চিমনি ধোঁয়া ছাড়ে
রথের মাঠে মস্ত দেয়াল
রাত হলে ডাকে না শেয়াল
শিবুমাষ্টার আনাজ বেচেন বসে পথের ধারে।
খেলার মাঠে মস্ত বাজার,
দুধারে গাড়ি, বাড়ির সার
অশত্থ তলায় শ্যাম নাই, দেকি মন্দিরে হনুমান।
টুনটুনা কেউ নেয় না হাতে
সকাল, বিকেল, সনঝ্যা, রাতে
যায় না শোনা রাধাকৃষ্ণের দোল ঝুলনের গান।
নাই সে গোলা, ধানের খ্যাত,
নাই গোয়াল, নাই জমি-জিরেত।
ফ্যালাট ঘরে বিজলী বাতি, নাই ছাগলের ছা।
নাই সে উঠান, নাই সে দাওয়া,
কুঁড়েঘর নাই বিচালি ছাওয়া
ঠাম্মী বলেন, পোড়ার শহর গিলে খেয়েছে গাঁ।
শঙ্কর রুদ্র
২৫-০৮-২০২০
নয়ডা