বড় বেদনার শাওন গহন বাইশের বারিধারা,
অন্তর হতে আকুলি বিকুলি, নয়নে অশ্রুধারা,
অথৈ চিত্ত উথালিপাথালি,
অন্তবিহীন তিমির রজনী, অঙ্গ চেতনাহারা,
সমবেত যারা ঘিরে চারিপাশে, উদাসীন সাথিহারা,
কৃষ্ণ বর্ণ অশনি নীরদে, রবি কেন বাণীহারা?
এমনই এক গুরুগুরু শ্রাবণ ঘনঘটার অন্তরালে
স্ফুলিঙ্গের মতো সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বে,
আপামর বাঙালি হতচকিত হয়েছিল কবিপ্রয়াণে।
১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে
ফুলে-ফুলে সজ্জিত কবিগুরু, সেদিন শায়িত চিরঘুমে,
সজ্জিত শকটে যাত্রা লক্ষ লক্ষ মানুষের জনারণ্যে।
বাইশে শ্রাবণ: জনপ্লাবনে জোড়াসাঁকো অভিযান,
বাইশে শ্রাবণ: কোমল আবেগে নিদারুণ অভিমান,
বাইশে শ্রাবণ: বাঙালির প্রাণ বেদনবীণায় ম্লান,
বাইশে শ্রাবণ: অশ্রুসজল ভাসিয়ে দেওয়ার গান,
বাইশে শ্রাবণ: স্মৃতি বিজড়িত নিঃশেষ করে দান,
বাইশে শ্রাবণ: প্রণমি তোমাকে, হে বিশ্বজয়ী মহাপ্রাণ।
কাব্যের মূর্ছনায় ভাসতে ভাসতেই
বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, তাঁরই রচিত কাব্যের মাধ্যমে:
"কোনোদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস
ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ,
সেই ক্ষণে খুঁজে দেখো–কিছু মোর পিছে রহিল সে
তোমার প্রাণের প্রান্তে; বিস্মৃতিপ্রদোষে
হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নাম-হারা স্বপ্নের মূরতি"।
হে বিশ্বকবি আমাদের লহ প্রণাম।