ডান পায়ের চপ্পলটা ছিঁড়ে গিয়েছিল,
ট্রেন ততক্ষণে ঢুকে পড়েছে স্টেশনে,
না দৌড়লে দেরি হয়ে যাবে, এই ভেবে
এক পায়ে চপ্পল পড়েই, পলাশ উঠে পড়ল ট্রেনে।
একজন বলল
পলাশদা ওটার আর মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
আর একজন বলল
আরে পরের ট্রেনে, বৌদি নিয়ে আসছে।
পলাশের মাথাটা ঝিমঝিম করছিল,
কয়েক মাস ধরে খুচরো টাকা জমিয়ে
গত সপ্তাহেই চপ্পল জোড়া, কিনেছিল,
কেন যে ফেলে দিল, সারানোও তো যেত।
নানান কথা সহ্য করেও,
বাঁ পায়ের চটিটা পড়েই, দাঁড়িয়েছিল হাতল ধরে।
স্বভাবতই নানান চিন্তাভাবনা, মাথার দখল নিয়ে নিল,
দু একজন চেনা হকার তাদের পণ্য বিক্রি করছিল,
ট্রেনটা প্রায় সব সিগন্যালেই দাঁড়িয়ে পড়ছে,
অনেকেই সেই নিয়ে আলোচনা করছে,
মন্তব্যে দেশ, সরকার, নেতাদের কেচ্ছা উঠে আসছে,
পলাশের কিছুই ভাল লাগছিল না।
গন্তব্য স্টেশনে নেমে, সবার চোখের আড়ালে গিয়ে,
একপাটি চপ্পলটা, একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিল।
যে দোকানে কাজ করে, সেটা প্রায় ই-মলের মতো,
সেখানে পুরো ড্রেস, এমনকি জুতোটাও রাখা থাকে।
তাই রাত আটটা পর্যন্ত কোনও অসুবিধা হল না,
ছুটির পর,ডিউটি করার জুতো পড়েই রওয়ানা হল।
মাস গেলে মেলে, মোট ছ' হাজার,
তার মধ্যে ঝুপড়িটার ভাড়াই তো শ পাঁচেক,
বিধবা মা, বৌ, দুটি ছেলে, মোট পাঁচ জনের সংসার।
পলাশের বৌ, সকালে দুটো বাড়ি ঠিকা কাজ করে,
মাস গেলে হাজার তিনেক পায়,
ঐ টেনেটুনে কোনওরকমে চলে যায়।
ফেরার পথে ট্রেন থেকে নেমেই, খোঁজ করতে করতে,
অবশেষে পেয়েই গেল, ফেলে যাওয়া ছেঁড়া চপ্পলটা।
দুর্যোগের মেঘটা কেটে, মুখে তখন চাঁদের হাসি,
মনে হচ্ছিল, লটারির প্রথম পুরস্কারটাই পেয়ে গেছে।
পাড়ায় ঢুকে, ছাতিম গাছটার পাশ দিয়ে যেতে যেতে,
প্রাণ ভরে ফুলের সুবাস নিয়ে, পলাশ বাড়ি ঢুকল।