স্ত্রী: আর পারি না! জীবন আমার হল ছাড়খার,
এ নিয়ে তুমি দেখছি বড়ই নির্বিকার।
কেমনতর স্বামী তুমি বোঝা বিষম দায়,
উদাসীন ভাবটা তোমার আমারে কাঁদায়।
স্বামী: নিত্যদিন শুনছি কেবল তোমার অভিযোগ,
এ সংসারে চিরটাকাল তোমার দুর্ভোগ।
শুনে শুনে কান আমার ঠিক গিয়েছে পচে,
পাই না ভেবে কোন ওষুধে তোমার দুঃখ ঘুচে।
স্ত্রী: মেজাজ আমার চড়িও না রসিকতা ছাড়,
পরের দুঃখে রং-তামাসা কেমন করে পার?
আমার দরদ ধরতে যদি এতই তোমার বাধে—
বিয়ে তবে করেছিলে বল তো কোন সাধে?
স্বামী: বলতে পার তোমার দরদ আর কিভাবে ধরি?
সংসারের সব কাজই তো মিলেমিশে করি।
খাবার-দাবার সেও তোমায় খাওয়াই বেশি বেশি,
নিজের পাতে স্বল্প খাবার নিয়েই থাকি খুশি।
স্ত্রী: শেষমেষ দিলে খাবার খোটা এও ছিল কপালে,
ছোটলোকি ভাবটা তোমার গেল না কোন কালে।
বাপের ঘরে ভালোই ছিলাম নরক তোমার ঘর,
তোমার ঘরে সারা জীবন হয়ে রলাম পর।
স্বামী: এত দিনেও এই বাড়িটা নিজের ভাবতে পারলে না,
তোমার বাড়ি, আমার বাড়ি বোধটা কভু ছাড়লে না।
এই বাড়িটা তোমার-আমার দু’জন সমান ভাগিদার
এই বোধটা জাগাও প্রাণে কেটে যাবে দুঃখের ভার।
স্ত্রী: সে বোধটা জাগিয়ে নিতে কষ্ট লাগে প্রাণে,
তোমার মায়ের শাসনবেড়ি দেখি যে সবখানে।
এ সংসারে শান্তি আমার কেড়েছে ঐ বুড়ি,
তাই তো সব দুঃখ প্রকাশ তোমার কাছেই করি।
স্বামী: মায়ের সন্তান হয়ে আমি বেশ ভালোই জানি—
এ সংসারের লাগি তাহার দরদ কতখানি।
হিংসা ভুলে এখন তুমি থাকো ধৈর্য ধরে,
একদিন এ সংসারের ভার আসবে তোমার ঘড়ে।
স্ত্রী: বেশ বলেছ, হয়তো সেদিন জুটবে না কপালে,
তার আগেই সংসার থেকে যাব পটল তুলে।
পান থেকে চুন খসলে কঠিন কথার বাণ,
নিত্য আমার জীবনটাকে করিছে খান খান।
স্বামী: সংসারের হাল ধরাটা সহজ অত নয়,
দুঃখ হেরি দমে গেলে আসবে পরাজয়।
আজকের এই দুঃখ তোমার শিক্ষার অনুকূল,
সংসারের হাল ধরতে গিয়ে করো না এই ভুল।
স্ত্রী: ঠিক বলেছ, আমাদেরও আছে একটা ছেলে
শাশুড়ি তখন হতে হবে বৌমা ঘরে এলে।
শাশুড়ির শাসন জ্বালা ভালোই আমি জনি,
তাই তো আমি তোমার মাকে শিক্ষাগুরু মানি।
স্বামী: বেশ বলেছ, এবার তবে দ্বন্দ্ব ভুলে যাও,
আমার মায়ের দুর্ব্যবহার ঝেড়ে ফেলে দাও।
বইবে তবে সুখের বাতাস ঘর-সংসার জুড়ে,
তোমার মনের দুঃখরাশি উড়ে যাবে দূরে।