স্বপ্ন দেখে রাজকন্যা দিবস শয্যায়;
জেগে ওঠে রাজবালা মরিছে লজ্জায়।
দেখিল স্বপ্নযোগে যুবক কোচোয়ান—
তারি পাশে শয্যা পরে করিছে শয়ান।
ধরমরি ওঠে কন্যা বিছানার পরে;
বসিয়া চারিদিকে নয়ন মেলে ধরে—
দেখে ঠিক বন্ধ আছে ঘরের দুয়ার
তারপর ধীরে যায় জানালার ধার।
সন্তর্পণে চোখ রাখে খোলা জানালায়,
ধারে-কাছে কোচোয়ানে দেখিতে না পায়।
দেখে রাজকন্যা একি কদর্য স্বপন
নিয়ত এ স্বপ্ন তারে করে দংশন।
মাঝে মাঝে স্বপ্ন আনে— সুখ নিরন্তর,
সুখামৃতে রাজবালার ভরে অন্তর।
ভাবে কন্যা কোচোয়ান করেছে কি জাদু
নাকি বাঁধা প্রেমরাখি; স্বপ্ন নয় এ শুধু?
তার ঠিক পরদিন নিশিঘুম ঘোরে
স্বপ্ন হেরিল শুয়ে খাটিয়ার পরে;
হেরিল স্বপ্নে কন্যা বাগান প্রাঙ্গণে-
ভ্রমিছে সে পায়চারি করে আনমনে।
সেই ক্ষণে ঘোড়া লয়ে কোচোয়ান যুবা
সওয়ার হয়ে আসে— বুঝি দেয় থাবা
এই ভয়ে রাজকন্যা চিৎকারের প্রায়;
কিন্তু যুবার হাসিতে কান্না ধুয়ে যায়।
হাসি হাসি মুখ করে কোচোয়ান বর
ইশারাতে কুমারীরে ঘোড়াপৃষ্ঠ পর—
উঠবার নির্দেশে লাগাম ধরি বসে;
রাজকন্যা পিছে বসি ধরে তারে কষে।
ঘোরবেগে ঘোড়া ছুটে দিগন্তের পানে
এই চলার শেষ কোথা কেহ নাহি জানে।
উদ্বেগে রাজকন্যার জলে ভরে আঁখি;
কোচোয়ানের সাথে কি বাঁধা প্রেমরাখি?
তারপর আরেকদিন স্বপ্ন দেখে বালা,
দৈত্য এক অট্টহাস্যে ভয়মূর্তি কালা;
দুই হাতে রাজকন্যে তুলে নিলে ঘাড়ে
তারপর চলে গেল গুহার আঁধারে।
রাজকন্যার ক্রন্দনে যুবা কোচোয়ান,
হানা দিল দৈত্য গুহে যেন বীর্যবান।
ভয়ানক যুদ্ধ করে দৈত্যেরে নাশিয়া—
কন্যাসহ রাজ্যে ফেরে হাসিয়া হাসিয়া।
আহ্লাদে কোচোয়ানে ধরিয়া নিজ বক্ষে—
মহারাজ পদোন্নতি দেন সেনাধক্ষে।
কন্যারে কোচোয়ানে করেন সমর্পণ;
রাজপুরে বেজে ওঠে বিয়ের বাদন।
বাসরে কোচেয়ান কন্যারে দেয় চুম;
সেই ক্ষণে নববধূ জাগে ভেঙে ঘুম।
স্বপ্ন তত্ত্ব বুঝল কন্যা, ঘুচল মনোধাঁধা
কোচোয়ান সাথে তার ঠিক রাখি বাঁধা।