আমার পরমাত্মীয় অর্থাৎ আমার স্ত্রীর একমাত্র আদরের ছোট ভাইটি, যার দৈনন্দিন কাজকর্ম বলতে কিছুই নেই কিন্তু দিনান্ত অঢেল ফুরসতের মাঝে অকাজ আছে ঢের। যখন ইচ্ছা সে এই ভগ্নিপতির আঙিনায় ছুটে আসে অন্নধ্বংস করতে। যতদিন খুশি সে তার বোন-ভগ্নিপতির গৃহটিকে ধন্য করে অন্ন ধ্বংসের কাজটি করে যায়, ওকে কিছু বলার কেউ নেই। কারণ সে এই পরিবারে গৃহকর্ত্রীর আদরের ছোট ভাই, আর গৃহকর্তার পরমাত্মীয়। আর ওদিকে আমার পরমের পরম যে দুজন, অর্থাৎ পূজনীয় শ্বশুর-শাশুড়ি তারা অতি সহজ-সরল; পুত্রস্নেহে একেবারেই অন্ধ। কাজেই আমার পরমাত্মীয়টিকে আর পায় কে?

শাসন-নিয়ন্ত্রণ বিহীন সবকিছুই অচল, বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এই অমোঘ বিধানের হাতছানিতে আমার পরমাত্মীয়টিরও সচল থাকা দুষ্কর হয়ে পড়ল। উচ্ছন্নে গিয়ে দাঁড়াল তার জীবন।

বাবার অর্থ সম্পত্তি তেমন খারাপ ছিল না। খারাপ ছিল না সামাজিক মর্যাদাও। উচ্ছন্ন পুত্রের সীমাহীন কেলেঙ্কারি সেই মর্যাদার স্তম্ভ কলঙ্কের চাদরে ঢেকে দিল। নিমেষে উন্মোচন করল মলাটবদ্ধ ঘৃণার নীল পাতাটিকে। ছিঃ ছিঃ রব উঠল চারদিকে। পরিবারের মানুষজন তথা নিকট আত্মীয়দের মুখ দেখানোই দায় হয়ে উঠল সমাজে। পুত্রের অসংখ্য অন্যায়ের দায় স্বীকারপূর্বক আপন ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাইলেন সহজ-সরল পিতা। প্রায়শ্চিত্তের খেসারত দিতে গিয়ে নিঃস্ব হল পরিবারটি। পৈত্রিক সম্পত্তি খুইয়ে নিঃস্ব হল উচ্ছন্নে যাওয়া পুত্র।

সম্পদ বিনষ্ট করে মেটানো গেল আর্থিক দায়। কিন্তু যে সামাজিক মর্যাদার দায় অনড় হয়ে রইল, তা কি করে মিটবে? এ প্রশ্নের কোন জবাব নেই, আমৃত্যু অমর্যাদার বোঝা বয়ে বেড়ানো ছাড়া বুঝি আর কোন পথও নেই!