কাপড়ের হিসাব না করে কোট কেটে দরজি
যেমন ভুল করে; তেমন একটা ভুল করলাম।
বসত ঘরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়লে
নতুন একটি ঘর করার সিদ্ধান্তের কথা শুনেই
বৃদ্ধা মা বলল, সারা জীবন ঘরের কষ্টে কাটালাম
পারলে এবার ছাদ ঢালাই করেই ঘরটা দাও।
মায়ের ইচ্ছার প্রাধান্য দিতে আগু-পিছু হিসাব
না করেই পাকা বাড়ির কাজ শুরু করে দিলাম।
গৃহনির্মাণের মিস্ত্রী যে হিসাবটা দিয়েছিল
তাতে মনে হয়েছিল কোন রকম হয়ে যাবে।
কিন্তু কাজটা শুরুর পর বুঝে ঠিক গেলাম—
হিসেবের সাথে বাস্তবতার বড় বেশি ফাঁড়াক।
অবশেষে আমার অবস্থা হলো একেবারে ত্রিশঙ্কু,
না পারলাম গিলতে, না পারলাম ফেলতে।
আমার নির্বুদ্ধিতার জন্য ছিঃ ছিঃ রব উঠল।
কানদুটি একেবারে ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা,
কানে তুলো দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলাম,
পালিয়ে বেড়াতে লাগলাম সমালোচকদের থেকে।
এবার পাওনাদারদের পালা, পাওনা আদায়ে উন্মত্ত
এদের থেকে পালানো বড়ই কঠিন, অন্যায়ও বটে।
এদের শক্ত কথার কামড় অসহনীয় হয়ে উঠলে
অনুভব করলাম এদের থেকে মুক্তি আবশ্যকতা;
পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সামান্য জমি ছিল আমার,
চাষাবাদ করে খেতাম, পাওনাদারদের চাপের কাছে
চাষাবাদের শেষ সম্বলটুকু তুচ্ছজ্ঞান হয়ে উঠল।
ঋণ থেকে মুক্তি মিললেও আমি নিঃস্ব হলাম;
এই সমাজে নিঃস্বদের গুরুত্বটা ঠিক যতখানি—
আমার গুরুত্বটাও ঠিক সেখানে এসে ঠেকল।
কিছুদিন আগেও অনেকেই আমাকে সমীহ করত,
আজ তা একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছেছে।
আমার নির্বুদ্ধিতা এবং অদূরদর্শী পরিচালনা জন্য
ধ্বংসপ্রায় হলো একটি পরিবার; কিন্তু আমার মতো
নির্বোধেরা যদি একটি রাষ্ট্রের পরিচালক হয়ে বসেন—
তবে গোটা জাতির ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
জানি, ক্ষমতায় আসীনরা নির্বোধ নয়, বুদ্ধিমান।
যথেষ্ট বুদ্ধির দরকার হয় ক্ষমতার আসনে বসতে,
আর টিকে থাকতে আরও বেশি। এদের এই বুদ্ধির
যদি অপপ্রয়োগ হয়, তবে দেশে বিপর্যয় ডেকে আনে।
দেখা দেয় সংকট, বেড়ে যায় বৈদেশিক ঋণের বোঝা।
জগতের কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়, ক্ষমতার আসনও
একদিন ভাঙে, দেশের মানুষকে ঋণের ভারে ন্যুব্জ করে
এরা ক্ষমতা ছাড়ে, দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়ে।
পালাবদল করে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসা সরকারগুলো
নিয়ম করে এমনই ভুলের মহড়া চলছে বহুকাল ধরে,
সম্রাট শাহজাহানও এমন ভুল করেন তাজমহল বানিয়ে;
গোটা রাজ্য জুড়ে সৃষ্টি করেছিলেন কৃত্রিম আকাল।