ফুটফুটে একটা শিশুকে বুকে আগলে ধরে,
পথে পথে হাঁটছে কুৎসিত এক নারী।
পাগলী ও, জীর্ণ মলিন বস্ত্র পরিহিতা;
গোসলহীন শরীরে তার কতোকাল ধরে
ময়লা-ধূলোরা বসিয়েছে ভালবাসার মেলা।
সিকনি-ঝরা নাক আর অমন বিশ্রী মুখের দৃশ্য
নিশ্চয় কোন রুচিশীল মানুষের ফিরে দেখার কথা না,
তবু কে একজন দেখেছিল বুভুক্ষা চোখে;
সেই দেখা ওকে সাজিয়ে দিয়েছে মা।
হিতাহিত জ্ঞান পাগলীর নেই,
নেই জীবনের কোন হিসেবের হুস,
অথচ সে এক মা!
নিয়তির কি এক দুর্বুদ্ধ মায়ামন্ত্রের ইশারায়—
মাতৃস্নেহের পরম উদ্বেগ ভরে,
কোলের কোমল শিশুটির অঙ্গজুড়ে
সযতনে এঁকে দিচ্ছে সে আদরের চুমু।
কোথা পেল সে অমন স্নেহের পরবশ?
তাৎক্ষণিক এ প্রশ্নের জবাব জাগে মনে,
মাতৃস্নেহ কোন পাত্রে ক্ষয় নাহি মানে;
স্নেহের মহিমালোকে তা উজ্জ্বল সদা।
হোক না বোধহীনা স্নেহধারিনী মায়ের প্রাণ
হিতাহিত জ্ঞান তার থাক বা না থাক;
মাতৃ-হৃদয় হতে আপন সন্তানের তরে—
স্নেহের বাৎসল্য সুধা আপনি ঝরে পড়ে।
কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে পাগলীরে দেখে,
কে সেই নরাধম ওরে সাজিয়ে তুলিল মা?
কেবা কোলে তুলে দিলে অমন নধর শিশু?
নিষ্পাপ এ নরশিশু জানে না ওর পিতৃ পরিচয়
জানবেও না কোনদিন কেবা ওর পিতা।
পিতা সেতো জন্মদাতা পরম পুরুষ
তারে নিয়ে মানবের বংশ পরিচয়।
হায়রে অভাগা নিষ্পাপ-নির্বোধ শিশু,
এসেছিস বোধহীনা এক পাগলী মায়ের কোলে
জানলি না তোর পিতৃ পরিচয়!
এই বিশ্ব চরাচরে সবই তো স্নেহ ভরে
পিতারে প্রণতি করে, জগত জুড়া
মানবকূলের এই তো নিয়ম।
তুই শুধু একা একা আক্ষেপে-ক্রোধে,
সেই পুণ্য নিয়মেরে করবি লঙ্ঘন।
জন্মদাতার প্রাপ্য প্রণতিরে ধিক্কার জানাবি তুই;
আর অভিশাপের আগুনে পুড়িযে মারবি—
তোর সেই পরিচয়হীন অদৃশ্য পিতাকে!